আজ কথা বলার দিন। কথা বিনিময়ের দিন। সংলাপ মুখর হবে রাজনীতির ময়দান। প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণে গণভবনে যাচ্ছেন ঐক্যের নেতারা। নির্বাচন কমিশন যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
Advertisement
সংলাপ শুরু হলো। কথা চলবে। কথার পিঠে কথা হবে। কখনো মনে হবে আলাপ বুঝি জলে গেল। আবার পর মূহুর্তেই ইউটার্ন। রাজনীতির কৌশল কখন কোন পথে হাঁটতে শুরু করবে বলা মুশকিল। দিন চারেক আগেও মনে হচ্ছিল রাজনীতির গন্তব্য অনিশ্চিত। কিন্তু হেমন্ত যেমন করে শীতের হিম ছড়াতে শুরু করলো আচমকাই। তেমন করেই রাজনীতির মাঠ উষ্ণ হয়ে উঠলো।
উষ্ণতা যে আগে ছিল না তা নয়। তবে সেই উষ্ণতায় ছিল আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অদ্ভুত মৌনতা। সেই জায়গা থেকে স্বস্তির বায়ু বইতে শুরু করলো। চট করে বলা যাবে না এই বায়ু শেষ পর্যন্ত বসন্ত বাতাসে পৌঁছে দেবে কিনা। এতোটুকু বলা যায় কথার যেখানে শুরু সেখানে একটা শুভ পরিণতি প্রত্যাশা করাই যায়।
অবশ্য পেছনের পাতা উল্টে গেলে দেখতে পাবো- এক /এগার পূর্ব আমরা সংলাপ দেখেছিলাম দুই দলের সাধারণ সম্পাদক, মহাসচিব পর্যায়ের। সেই সংলাপের ফলাফল এক/ এগারোর দুয়ারে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পৌঁছে দিয়েছিল।
Advertisement
এবার একটু ভিন্নতা আছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে দাওয়াত। তিনি কথা বলবেন। সুতরাং যারা আমন্ত্রিত তাদের দফা, শর্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে কথা শোনা ও শর্ত বিবেচনা করার আন্তরিকতা এই দাওয়াতের সঙ্গে যুক্ত আছে বলেও বিশ্বাস রাখি।
ভোটের নকশা কেমন হবে তা আঁকতেই এই সংলাপ। এবারের ভোটের রাজনীতির সকল পক্ষ অংশ নেবে। এটা সরকারি দলের দিক থেকে বহু আগেই বলা হচ্ছে। এগারতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নকশা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হবে না, একথা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন।
সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলে আসছেন রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। যে কোন উপায়ে তারা ভোটে আসবে। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে। তার শাস্তির মেয়াদ বাড়ছে। মুক্তির নিকট সম্ভাবনা নেই।
তারেক রহমানের শাস্তি হয়েছে। ভোটে দুইজনের অংশ নেয়ার আপাতত সম্ভাবনা নেই। আছে শীর্ষ নেতা ও মাঝারি নেতাদের মামলার দৌড়। সভা-সমাবেশ ও সরকারের অনুমতি নির্ভর। তারপরও বিএনপি ভোটের পথে হাঁটছিল। এখনতো দেখা যাচ্ছে দৌড়াচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের হাত ধরে। এই হাত ধরায় ফায়দা হয়েছে। খুলে গেছে কথা বলার পথ।
Advertisement
ভোট হবে, দিনক্ষণ আর কয়েকটা দিন পর হয়তো জানা যাবে। তবে এই যে সংলাপ এবং ভোট সেখানে জন মানুষের চাহিদাপত্র কতোটা মূল্যায়িত ও বিবেচিত হবে। সরকারি দলের যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের অনেকেরই আমলনামা ভাল নয়। সাধারণ ভোটারদের ছাড়াই, দলীয় নেতা-কর্মীদের দিক থেকেই তাদের বিষয়ে আপত্তি আছে।
এদিক গুলো দলের প্রধান বিবেচনায় রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি নিশ্চয়ই ভোটে জয়ী হয়ে আসতে চান। সেক্ষেত্রে তিনি তৃণমূলের সুপারিশ আমলে আনবেন নিশ্চয়ই। যারা সংসদ সদস্য পদ’কে অন্য ব্যবসার মতো এক প্রকার বিনিয়োগের ক্ষেত্র ভেবে নিয়েছিলেন, তাদেরকে কোন দলেরই প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না। এতে রাজনীতির গুণগত মান কমে যায়।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাদেরকে ভাবনায় রাখতে হবে সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকাকালীন কারা বিতর্কিত ছিলেন। সংসদের বাইরে থাকা, ক্ষমতার বাইরে থাকার সময়ে কোন নেতা কর্মিরা মাঠে ছিলেন, লড়াইতে ছিলেন। তাদের মূল্যায়ন না করে আসন বেচে দিলে বা নিলামে তুললে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলেরই শরিকদের আসন উপহার দেবার সময়ই ঠিক ঠাক মতো অঙ্ক কষে নিতে হবে। না হলে ভোটের ফলাফলে বড় লোকসান হয়ে যেতে পারে।
উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা উন্নয়নের পথ থেকে সটকে পড়তে পারবেন না। কিন্তু উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের অধিকারের উন্নয়নের প্রতিও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদার হতে হবে। তবেই চলমান সংলাপ স্বাদু হবে জনগণের কাছে।
লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।
এইচআর/আরআইপি