দেশজুড়ে

বিয়ের দিনে বর-কনের ব্লাড ক্যাম্পিং

সৌরভ এবং তৃষা। তাদের প্রতিদিনের বড় একটি অংশ চলে যায় অসহায় মানুষের রক্ত যোগাড়ের পেছনে। সৌরভ ভট্টাচার্য নিজে এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ৩৮ জন গরিব রোগীকে এবং ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কত অসহায় রোগীকে রাত-বিরাতে রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছেন তার হিসাব নেই। তবে প্রায়ই মধ্যরাত কখনো শেষরাত পর্যন্ত বা গরিব রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহের কাজ যাচ্ছেন। এতেই তার আনন্দ এতেই তার সুখ। তার এই পথচলায় ২০১৫ থেকে বন্ধু হিসেবে কাছে পেয়েছেন তৃষা চক্রবর্তীকে। ভালো বন্ধুত্ব থেকে শেষ পরিণতি বিয়ে।

Advertisement

বুধবার ছিল তাদের বৌভাত। রক্তের পেছনে ঘুরে প্রতিদিনের সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করা এই জুটির বৌভাতেও ছিল রক্তের ক্যাম্পিং। বিয়ে বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হয় এই ক্যাম্পিং এবং প্রায় শতাধিক মানুষের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয় বিনামূল্যে। বর-কনে মিলে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য অনুষ্ঠানে আগত অতিথিকে উদ্ধুদ্ধ করেন এ সময় তাদের ব্লাড ক্যাম্পিং সংশ্লিষ্ট সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে অনুষ্ঠিত এই হয় বৌভাত। বুধবার সন্ধ্যার দিকে বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কয়েকজন সহযোগীসহ ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এবং রক্তদানে আগত অতিথিদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

বর সৌরভ বলেন, মানুষের জন্য মানুষ। প্রয়োজনের মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা সেই জানে যার জীবনে একবার রক্তের প্রয়োজন পড়েছে আর সেই মুহূর্তে রক্ত যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

Advertisement

২০১৫ সালে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা প্রতিষ্ঠান সন্ধানী দিয়ে তার এই পথচলা শুরু হলেও বর্তমানে তিনি রাইট টার্গেট মৌলভীবাজারের সদস্য। রাইট টার্গেটে পর্যন্ত মৌলভীবাজারে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের রক্তের গ্রুপ বিনামূল্যয়ে পরীক্ষা করে দিয়েছে এবং তাদেরকে নিজেদের সদস্য বানিয়ে রক্তদানে উৎসাহ দিচ্ছে।

কনে তৃষা চক্রবর্তী বলেন, আমরা আমাদের বিয়ের কার্ডেও রক্তের প্রয়োজনীয়তা এবং স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ হতে পারে সে বিষয়েও সচেতনতা তৈরি করতে চেষ্টা করেছে। আমাদের উদ্দেশ্য স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষ উৎসাহ দিয়ে অসহায় রোগীদের পাশে থাকা এবং রক্ত দিয়ে যারা ব্যবসা করে রোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের থেকে মানুষ দূরে রাখা।

মৌলভীবাজার রাইট টার্গেটের সভাপতি এ এস এম রাসেল বলেন, বর-কনে দুইজনই নিয়মিত রক্তদাতা। বিয়ের দিনেও তারা মানুষের কথা চিন্তা করে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুব ভালো দিক। আমি সারাদিন তাদের পাশে ছিলাম। এই দুইজনের মতো প্রতি এলাকায় রক্তদাতা এবং অসহায় রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করে দিতে তাদের যে আগ্রহ তা প্রচেষ্টা তা প্রতিটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সেটাই প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, সৌরভের মতো মানবিক মানুষ হয় না। রাত ৩টা বা ৪টায় দিকেও যদি তারে কল দিয়ে কেউ বলে রক্ত লাগবে সে সাথে সাথে পায়ে হেটে রওনা দিয়ে দেবে এমন রেকর্ড তার অসংখ্য আছে।

Advertisement

রিপন দে/বিএ