রাজনীতি

সব দলের সঙ্গে সংলাপ করতে চান প্রধানমন্ত্রী : কাদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের বিষয়ে আন্তরিক এবং সব দলের সঙ্গে সংলাপ করতে চান বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংলাপের বিষয়ে আন্তরিক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট ছাড়াও অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। যেসব দল প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গেই সংলাপে বসতে আগ্রহী।’

বুধবার মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি এ্যানিক বর্ডিন এবং জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোতি এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে যে শুধু কি ঐক্যফ্রন্ট বা যুক্তফ্রন্টের সঙ্গেই সংলাপ? সে ব্যাপারেও আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা দরকার যে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- তিনি অন্যান্য দলের সঙ্গেও সংলাপে বসতে রাজি। আমরা দেখি কারা কারা সংলাপের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সময় হয় কিনা এটাও ম্যাটার। সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয় আছে, তার আগে যতটা সম্ভব দলের সঙ্গে সংলাপ করার ইচ্ছা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

Advertisement

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেই কাভার হয়ে যাবে।

বিএনপি বা ২০ দল যদি প্রস্তাব পাঠায় তাহলে কী হবে- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘না, না, এখন তো সময় নাই। যদি নির্বাচন কমিশন ৩, ৪ বা ৫ তারিখ নির্বাচানের তফসিল ঘোষণা করে। তাহলে কী করে আর বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা হবে? প্রধানমন্ত্রীর জন্য এখন সময় বের কারাটা কাঠিন কাজ। আগামী ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ থেকে ফিরে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বসবেন তিনি।

বেগম খালেদা জিয়ার রয়ের পর বিএনপি সংলাপের রেজাল্ট নিয়ে শঙ্কিত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রায়টা আওয়ামী লীগ দেয়নি, সরকারও দেয়ানি, প্রধানমন্ত্রীও দেয়নি। রায় দিয়েছে আদালত। তাই এ রায়ের সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংলাপ সংলাপের পথেই চলবে। সংলাপে তারা এ বিষয়টিও উত্থাপন করতে পারবেন। যেহেতু সংলাপে কোনো পূর্বশর্ত আরোপ করা হয়নি। তাই তারা আলোচনা করতে পারে। কিন্তু এই বিষয়টিতো একেবারেই আদালতের বিয়ষ।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘আদালতের একটা রায়কে সংলাপের সঙ্গে সংযুক্ত করা কি ঠিক হবে? তবে আলোচনার পথে কোনো বাধা নেই। বিষয়টিতো এমন নয় যে, আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেছে আবার আওয়ামী লীগই তাকে মুক্ত করবে। আদালতে বিষয় তাদেরকে আদালতেই ফাইট করতে হবে। উচ্চ আদালতে রায় হলে এখানে রিভিউও আছে। তারা রিভিও করতে পারবে।’

Advertisement

কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংলাপের জন্য যে চিঠিটি দিয়েছেন সেখানে লেখা আছে- সংবিধান সম্মত সব বিষয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা দাবি দিয়েছে তার কিছু কিছু দাবি সংবিধানের সঙ্গে যায় না। সংবিধান সম্মতভাবেই সংলাপে সব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। আলোচনার পরেই তো একটা রেজাল্ট আসবে। তার আগে আমি এ ব্যাপারে কেনো মন্তব্য করবো না।

সংলাপ বিষয়ে কেউ কেউ বলছেন এটা সময় ক্ষেপণ- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টিকে যে সবাই সমান চোখে দেখবে এটা মনে করার তেমন কোনো কারণ নেই।

সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংবিধান সংশোধন এক মিনিটের ব্যাপার- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এক মিনিটের বিষয় কিনা সেটাও আলোচনার টেবিলে আলোচনা হবে, সিদ্ধান্ত হবে। এক মিনিটে কীভাবে সম্ভব? কোর্ট রায় দিয়েছে- পঞ্চম সংশোধনী সেখানে গিয়ে সংশোধন করতে হবে। সেটা কি এখন সম্ভব?

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আলোচনা থেকে অনেক কিছুই জানা যাবে। আলোচনায় কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট করা নাই। তারা যোকোনো ইস্যুতে যেকোনো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী কোনো পূর্বশর্ত আরোপ করেননি।

সংলাপে আওয়ামী লীগে সদস্য সংখ্যা ২০ জনের মধ্যেই থাকবে বলেও জনান তিনি।

নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের কোনো সরকার হবে না। বর্তমান সরকারই থাকবে। তবে তাফসিল ঘোষণার পর সরকারের কার্যপরিধি কমে যাবে।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সংলাপে বসতে রাজি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২ নভেম্বর বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট্রের সঙ্গে সংলাপ করবে ক্ষমতাশীন দল।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।

এমইউএইচ/এমবিআর/পিআর/জেআইএম