বাম পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় গুরুতর ইনজুরিতে আক্রান্ত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার চামেলি খাতুনের (২৭) পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
Advertisement
মেরুদণ্ডে ব্যথাসহ অবশ হয়ে যাচ্ছে চামেলির শরীরের এক অংশ। গত ২০ দিন ধরে একেবারে বিছানায় তিনি। খেলাধুলা তো দূরের কথা স্বাভাবিক কাজকর্মও হয়ে উঠেছে তার। বিনা চিকিৎসায় নিভে যেতে বসেছে মাঠকাঁপানো এই নারী ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার।
টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে।
গণমাধ্যমে এ সক্রান্ত খবর প্রকাশের পর সেটি নজরে আসে সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের। চামেলিকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় দলের এই দুই তারকা ক্রিকেটার। এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিত্তবানরাও। তবে আশ্বাস দিলেও বিসিবির সহায়তা এখনো পাননি দুঃসময়ে আটকা পড়া চানেলি।
Advertisement
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আবারও আশায় বুক বাঁধছেন চামেলি খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার এই কঠিন সময়ে এগিয়ে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল রাতে ফোন দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ভাইও। তারা দুজনই আমাকে সর্বাত্মক আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
চামেলি খাতুন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। ক্রিকেটার হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন, কাঁপন ধরিয়েছেন বিরোধী শিবিরে। এখন তিনিই পরাস্ত ইনজুরিতে। গত ২০ দিন ধরে শরীরের নিচের অংশ ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে তার। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। চিকিৎসা এবং পরিবার চালানো লড়াকু এই নারীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চামেলি রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার রুস্তম আলী ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে। ছয় বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট চামেলি। বৃদ্ধ বাবা মা ছাড়াও স্বামী পরিত্যক্তা বোনকে নিয়ে সংসার তার। খেলা আর সংসার চালাতে গিয়ে নিজের ঘর বাঁধার সময় মেলেনি তার। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক রকম ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন চামেলি।
চামেলি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে অপরিহার্য সদস্য ছিলেন তিনি। তুখোড় এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে নামতেন তিনে। মিডিয়াম পেসার হিসেবে জ্বলে উঠতেন দলের প্রয়োজনে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে।
Advertisement
নৈপূণ্য দেখিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলেও। কিন্তু বছর আটেক আগের ইনজুরি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ফেলেছে হুমকিতে। থেমে গেছে ক্রিকেটের আয়ে চলা সংসারের চাকা।
চামেলি জানান, অন ডে স্ট্যাটাস সামনে রেখে দলের প্রস্তুতি চলছিল। ফিল্ডিং প্রশিক্ষণ চলাকালীন পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে আবাহনী ক্রীড়া চক্র মাঠে প্রশিক্ষণে গিয়েও আরেক দফা আঘাত পান। কিন্তু কখনোই যথাযথ চিকিৎসা নেননি। এই ইনজুরি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছে।
পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে নিজের চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। চামেলি আনসার বাহিনীর নারী সদস্য। কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশয়ী। মাঝে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরীক্ষায় সেখানেই ধরা পড়ে এই অসুস্থতা। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসার পথে এগুতে পারেননি চামেলি।
তিনি জানান, এরই মধ্যে আনসার তাকে চিকিৎসাজনিত ছুটি দিয়েছে। সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন বাহিনীর সদস্যরা।
বিএ