আন্তর্জাতিক

মানবসৃষ্ট বর্জ্য নিঃসরণে হুমকির মুখে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য

গত কয়েক দশকে মানব বর্জ্য নিঃসরণের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মাত্রায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ও বিলুপ্তি ঘটেছে। ১৯৭০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে শুধুমাত্র এ কারণে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডের বেসরকারি দাতব্য সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

লিভিং প্লানেট রিপোর্ট নামে সংগঠনটির সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীসহ মাছ ও পাখি মানব সৃষ্ট এ বিপর্যয়ের শিকার। গণহারে বন্যপ্রাণীর প্রতি এমন অবিচারের কারণে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে স্থায়ী নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতি দুই বছর অন্তর লিভিং প্লানেট রিপোর্ট নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার। এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও সংরক্ষণ বিষয়ে পরিসংখ্যান হাজির করে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের চারভাগ অঞ্চলের মাত্র একভাগ অঞ্চলে মানবসৃষ্ট এ বিপর্যয় থেকে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদ। তাছাড়া বাকি তিনভাগে তাদের জীবন চরমভাবে সংকটাপন্ন। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দশ ভাগের মধ্যে নয় ভাগ অঞ্চল বন্যপ্রাণী বসবাসের অনুপুযুক্ত হয়ে উঠবে।

Advertisement

প্রতিনিয়ত মানুষের খাদ্য, জ্বালানি, বাসস্থান ও পানির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। সম্প্রতি কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বন উজাড় করাকেও একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনভূমিগুলো উজাড় হওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। কেননা ওইসব বনাঞ্চলে সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীদের বসবাস।

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বন্যপ্রাণীরা সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে পড়েছে। ১৯৭০ সালের তুলনায় ওই অঞ্চলে ৮৯ শতাংশ বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। প্রতিবেদন বলছে, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় শিকার স্বাদু পানির প্রাণীগুলো। মারিয়ানা ট্রেঞ্চসহ বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রের তলদেশ থেকে নানা ধরনের প্লাস্টিকের তৈরি বস্তু পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাদু পানির প্রাণীর সংখ্যা ১৯৭০ সালের তুলনায় ৮৩ শতাংশ কমেছে। মানুষ ও প্রকৃতির কথা বিবেচনায় নিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন চুক্তি করার বিকল্প নেই। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষরা যদি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভোগ্যপণ্য এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয় ও সচেতনতা সৃষ্টি করে তাহলেই একটা জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বে বসবাস করতে পারবে মানুষ।

এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চার হাজার প্রজাতির ১৬ হাজার ৭শ’র বেশি প্রাণীকে নিয়ে। এছাড়া এ বিষয়ে পূর্বের বিভিন্ন ফলাফলও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Advertisement

এসএ/পিআর