পরকালে মানুষের মুক্তিতে শাফায়াত বা সুপারিশ করবে কে? নবি ব্যতিত আর কেউ কি মানুষের জন্য সুপারিশ করতে পারবে? শাফায়াতের একচ্ছত্র ক্ষমতাই বা কার? এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা সবার জন্য আবশ্যক। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন।
Advertisement
পরকালে শুধুমাত্র প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সুপারিশ করবেন না বরং সেখানে অন্যদেরকেও সুপারিশ করার ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা প্রদান করবেন। আর তারা হলো- ফেরেশতা, আল্লাহর প্রিয় বান্দা, নিষ্পাপ মাছুম বান্দা, রমজানের রোজা এবং কুরআন ও কুরআন তেলাওয়াতকারী।
তবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন বিশ্ব মানবতার জন্য সর্বোচ্চ প্রথম শাফায়াতকারী। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানের নেতা হব। সর্ব প্রথম আমাকেই কবর থেকে ওঠানো হবে। কেয়ামতের দিন আমিই সর্ব প্রথম সুপারিশ করবো এবং আমার সুপারিশই সর্ব প্রথম গ্রহণ করা হবে।’ (মুসলিম)
কারা প্রিয়নবির সুপারিশ লাভে ধন্য হবে তাও তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-
Advertisement
‘কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ওই ব্যক্তি যে ইখলাসের সঙ্গে (একনিষ্ঠভাবে) বলেছে, ‘আল্লাহ তাআলা ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই।’ (বুখারি)
তাই বলে…
নবি-রাসুল, ফেরেশতা, ওলি, পীর, ছোট ছোট মাছুম বাচ্চাসহ রোজা, কুরআন ও কুরআন তেলাওয়াতকারীর কাছে শাফায়াত বা সুপারিশ লাভে আবেদন করা যাবে না।
যদি কেউ উল্লেখিত ব্যক্তিদের কাছে শাফায়াত বা সুপারিশ কামনা করে তবে তা হবে তাদের উপসনায় নিজেকে জড়িয়ে ফেললে। যাদের উপাসনা আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য হারাম ঘোষণা করেছেন।
Advertisement
তাহলে শাফায়াতের একচ্ছত্র অধিপতি কে?
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে শাফায়াতের একচ্ছত্র অধিপতির কথা ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছেন কার কাছে
শাফায়াত লাভের আবেদন করা যাবে। তিনি হলেন শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেন-‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, সব প্রকারের শাফায়াতের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন আল্লাহ।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৪৪)
আরও পড়ুন > আজানের পর দোয়া ও দরূদ পড়বেন কেন?
তবে আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুল, ফেরেশতা, নেক বান্দা, ছোট ছোট নিষ্পাপ বাচ্চা, কুরআন, রোজা ও কুরআন তেলাওয়াতকারীসহ অনেককেই সুপারিশের অনুমতি প্রদান করবেন। তার অনুমতি ব্যতিত কোনো শাফায়াত অনুষ্ঠিত হবে না। তাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কুরআনে-
‘তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতিত তাঁর সামনে সুপারিশ করবে কে আছে এমন ব্যক্তি?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৫)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আল্লাহর নির্দেশিত ব্যক্তির জন্য শাফায়াত করবেন। সে বিষয়টিও কুরআনে ওঠে এসেছে-‘আর আল্লাহ যার সম্পর্কে মর্জি করেন সে ব্যক্তি ব্যতিত অন্য কারো জন্য সুপারিশ করবে না।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২৮)
সর্বোপরি কথা হলো-
শাফায়াত তারাই লাভ করবে যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করেছে, নির্ভেজাল ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া অন্য কারো জন্য শাফায়াতও অনুষ্ঠিত হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘বস্তুত ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো দ্বীনের উদ্দেশ্য করবে যে ব্যক্তি, তার পক্ষ থেকে আল্লাহর আদালতে তা (কোনো সুপারিশ) গৃহীত হবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৫)
সুতরাং বুঝা গেল শাফায়াতের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন মহান আল্লাহ তাআলা। আর তিনিই নবি-রাসুলসহ ওলি, শহিদ, ছোট বাচ্চা, কুরআন, রোজা ও কুরআন তেলাওয়াতকারীসহ অন্যান্য নেক বান্দাদেরকে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন।
বিশেষ করে
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্ব প্রথম শাফায়াত করার নির্দেশ দেবেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সর্ব প্রথম শাফায়াত করবেন। আর তাঁর শাফায়াতই সর্ব প্রথম গ্রহণযোগ্য হবে। এ ঘোষণাও রয়েছে কুরআন এবং হাদিসে।
তাই কারো শাফায়াত বা সুপারিশ লাভের আশায় না ঘুরে তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে যথাযথভাবে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই শ্রেয়। আর তাতে শাফায়াতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরকালে কামিয়াবি দান করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের কঠিন সময়ে চূড়ান্ত ফয়সালায় শাফায়াতের মাধ্যমে সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর