বিশেষ প্রতিবেদন

খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ড. কামাল নৈতিকতা হারিয়েছেন

অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান। দল, নির্বাচন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র।

Advertisement

‘আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্যকে এবারের নির্বাচন থেকে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেয়া’ এবং ‘দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই যথাসময়ে নির্বাচন হবে’ বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। দুই পর্বের শেষটি থাকছে আজ।

জাগো নিউজ : নির্বাচন ঘিরে সরকার একতরফা মাঠ দখলে রাখতে চাইছে। ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশেও বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে সমাবেশের জন্য লালদীঘি ময়দান চাওয়া হলো, অনুমতি দেয়া হলো অন্য জায়গায়। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এমন নীতি কী ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন?

Advertisement

আরও পড়ুন >> ৭০-এর অধিক এমপি বাদ পড়বেন

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : সিলেটে তো সমাবেশ করেছে। চট্টগ্রামেও সমাবেশ করলো। পুলিশ যেখানে চাইছে, সেখানে অনুমতি দিচ্ছে। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। সমাবেশে তো বাধা দেয়া হচ্ছে না।

জাগো নিউজ : আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বাধা দিচ্ছে বলে প্রমাণ মিলছে। সমাবেশ ঘিরে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের আটকও করছে পুলিশ…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : বিরোধী পক্ষের অজুহাত পুরনো। তারা এমন বলতে অভ্যস্ত। পুলিশ বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমাবেশে কোনো প্রকার বাধা দেয়া হচ্ছে না। কোনো কিছু না ঘটলেও তারা নানা অভিযোগ তুলে সরকারের বদনাম করতে চাইছে।

Advertisement

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকারের কথা বলছেন। আসলে সহায়ক সরকার কী, তারই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি আজ পর্যন্ত। স্বৈর সরকার, প্রশাসনযন্ত্র- এসব বামপন্থী শব্দ ব্যবহার করে আর ক্ষমতায় আসা যাবে না। ক্ষমতায় আসতে চাইলে উন্নয়নে ভরসা রাখতে হবে। মানুষের মন জয় করতে হবে।

আরও পড়ুন >> বিএনপিকে শক্তিশালী করতেই ড. কামাল ঐক্য করছেন

বাস্তবতার বাইরে গিয়ে কথা বললে হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন হবেই এবং প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হবে। বিএনপি জোট নিজেদের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান বলে উল্টাপাল্টা কথা বলছে। বিরোধী পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রার্থীই খুঁজে পাবে না বলে নানা দ্বিধা সৃষ্টি করতে চাইছে।

ড. কামাল হোসেন বিএনপির দাবি বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছেন। বিএনপির দাবি অসাংবিধানিক। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবিও অসাংবিধানিক। অথচ ড. কামাল হোসেন এই সংবিধানের প্রণেতা। সংবিধানে আছে, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আর কামাল সাহেবরা সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তারা ভিন্ন ধারার সরকার চাইছেন। এই অযৌক্তিক দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন করে কীভাবে?

জাগো নিউজ : সরকার এবং বিরোধী পক্ষের অবস্থান পুরোই বিপরীতে। তাহলে কি আরেকটি ‘৫ জানুয়ারির’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে না। এটি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাতে তো আর নির্বাচন ঠেকে থাকবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে- এমনটি সংবিধানে লেখাও নেই।

জাগো নিউজ : তাহলে তো ৫ জানুয়ারির মতোই...

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : বিএনপি অংশ না নিলে তো আর জোর করে আনা যাবে না। সংবিধানের বাইরে তো রাষ্ট্র, সরকার চলতে পারে না।

জাগো নিউজ : কিন্তু নৈতিকতার ঘাটতি তো থেকেই যায়?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : যারা নৈতিকতার কথা বলে সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন, তারা কি নৈতিকতায় বিশ্বাস করেন? নির্বাচনের কথা বলে তারেক রহমান বা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। আদালতের রায়ে তাদের বিচার হচ্ছে, সাজা হচ্ছে। এর বিপরীতে কথা বলা তো আদালত অবমাননার শামিল। আইনের মানুষ হয়ে ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাইছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ড. কামাল নৈতিকতা হারিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> নির্বাচনের কাঠামোই ভেঙে দিল কমিশন

জাগো নিউজ : ঐক্যফ্রন্টের গঠন নিয়ে সরকারদলীয় সংগঠনের নেতারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, তাতে আওয়ামী লীগ রীতিমতো চ্যালেঞ্জে পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। আপনি কী মনে করেন?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : রাজনৈতিক মঞ্চে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় সামনে আসে না। ড. কামাল হোসেনও বিপ্লবী বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে আমি তার মুখে এমন বক্তব্য শুনিনি। জনগণ তাদের গ্রহণ করলে অবশ্যই আমরা সাধুবাদ জানাবো। তবে সংবিধানের মধ্যে থেকেই কথা বলতে হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কথা বলে কেউ ফায়দা লুটতে পারবে না।

জাগো নিউজ : সরকার মামলা আর আদালতে ভর করে বিরোধী পক্ষকে দমন করতে চাইছে বলে অভিযোগ। গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাছ চুরি, চাঁদাবাজির মামলা হচ্ছে। একজন আইনজীবী হিসেবে এই বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : যে কোনো ব্যক্তি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারেন। মামলা করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু প্রমাণের বিষয় আদালতের। আদালতে প্রমাণ করতে না পারলে অবশ্যই ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন।

জাগো নিউজ : কিন্তু এই সময় ‘মাছ চুরির’ মতো মামলা অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : মামলা সরকার করেনি। বাদী আর বিবাদীর বিষয়। এখানে সরকারের কিছু করার নেই।

জাগো নিউজ : মামলা করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : একজন ব্যক্তির দলীয় পরিচয় থাকতেই পারে। প্রথমত, নাগরিক হিসেবে আইনি অধিকার সবাই পেয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের লোক মামলা করছে বলে সরকারের ওপর দোষ আসতে পারে না।

জাগো নিউজ : মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন জেলে। এখানেও সরকারের ইন্ধন আছে বলে বিরোধীরা মনে করছেন…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কী কারণে জেলে এটি সবার কাছেই পরিষ্কার। তার মতো ব্যক্তি কী করে একটি টেলিভিশন লাইভ অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করতে পারেন! তার বাবা একজন ক্ষণজন্মা মানুষ। কী করে তিনি এমন অসম্মানজনক কথা বলতে পারলেন!

আরও পড়ুন >> একত্রিত হলেই রাজনীতির মাঠে ঐক্য অটুট থাকে না

জাগো নিউজ : ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তো সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : চুপিসারে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয় নয়। জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছিল। কারণ তিনি লাইভ অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন। আমি যদি একজন মানষকে দুশ্চরিত্র বলে জেনেও থাকি, তবুও তো জনসম্মুখে বলতে পারি না।

জাগো নিউজ : কিন্তু ঘটনাটি রাজনৈতিক মোড়কে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। এখানেও সরকারদলীয় লোকজন মানহানির মামলা করছেন মাসুদা ভাট্টির হয়ে। এমন মামলা করা যায় কিনা?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : একজন নাগরিক হয়ে আরেকজনের সম্মানবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতেই পারেন। মাসুদা ভাট্টিও মামলা করেছেন। সবকিছু রাজনৈতিক রূপে না দেখাই ভালো।

জাগো নিউজ : একজনের হয়ে অন্যজনের মানহানি মামলা, আইন কী বলে?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। আইনে রেহাই পেলে ব্যারিস্টার মইনুল ছাড়া পাবেন। তবে আইন, আদালত তো মানুষের সম্মান রক্ষার জন্যই।

জাগো নিউজ : সরকার টিকে থাকতে অতিমাত্রায় পুলিশ আর আদালত নির্ভর হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর বিপরীতে কী বলবেন?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।

পুলিশ নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সহনীয় ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ করলে তো সাজা পেতেই হবে।

জাগো নিউজ : হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। ব্যাংক, শেয়ারবাজারের দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনায় সরকার। অথচ এখানে বিচারের গতি নেই…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : শুনানি হচ্ছে। আমিও বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির শুনানিতে অংশ নিচ্ছি। আদালতে দুর্নীতির প্রমাণ মিলছে না। অভিযোগ আসতেই পারে।

যারা শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের বিরোধিতা করেন, তারাই নানা অপবাদ রটাচ্ছেন।

জাগো নিউজ : দৃশ্যমান উন্নয়নের বিপরীতে গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়ন ঘটছে। রাষ্ট্রে বৈষম্য বাড়ছে বলে গবেষণায় উঠে আসছে…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : এটি অপপ্রচার। সরকার যে উন্নয়ন করছে, তা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন আর কোনো সরকার করতে পারেনি। আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। উন্নয়ন দিয়েই মানুষের মন জয় করেছি। মানুষ সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে আছে।

জাগো নিউজ : উন্নয়নের আড়ালে গণতন্ত্র চাপা পড়ার ভয় করছেন অনেকে…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। গণতান্ত্রিক সরকার উন্নয়ন করে গণতান্ত্রিক পন্থা দিয়ে। যারা সরকারের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক যাত্রা হিংসার চোখে দেখেন, তারাই এমন ভয়ের কথা বলছেন।

এএসএস/এমএআর/এসআর/জেআইএম