জাতীয়

মাতৃত্বের পূর্ণতা পেলেন নাজমা

মায়ের কোলে ফিরেছে সুরাইয়া। মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়া এই নবজাতক ২৫ দিন আগে পৃথিবীর আলো দেখলেও জম্মের পরপরই মায়ের বুকে ঠাঁই হয়নি তার। গর্ভজাত সন্তানকে এক মুহুর্তের জন্য বুকে জড়াতে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে থাকলেও সে সৌভাগ্য হয়নি মা নাজমা বেগমের। অবশেষে রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে মা ও মেয়ে উভয়ের জন্যই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিচালকের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর পরিবেশে চিকিৎসকরা শিশু সুরাইয়াকে তার মা নাজমা বেগমের কোলে তুলে দেন। প্রথমবারের মতো সন্তানকে  বুকে জড়িয়ে ধরার পর নাজমা বেগম আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, মেয়েকে ফিরে পেয়ে আমি ভীষণ খুশী। এ সময় তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.কানিজ হাসিনা শিউলী জাগো নিউজকে বলেন, নবজাতক সুরাইয়াকে প্রায় সুস্থ অবস্থায় মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও ভীষণ খুশী।তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরেই সুরাইয়াকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার অনুশীলন চলছিল। নার্সরা প্রতিদিন সময় নিয়ে মা নাজমা বেগমকে পই পই করে বুঝিয়ে বলছিলেন আর দশটা নবজাতকের মতো সুরাইয়া নয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভূমিষ্ট হয়েছে। তার ওজন কম। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। সুতরাং তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কোলে নেয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই যেন সংক্রমনের শিকার না হয় সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। টানা কয়েকদিন অনুশীলন করার পর আজ তাকে নাজমা বেগমের কোলে দেয়া হয়। বর্তমানে মা ও মেয়ে ঢামেক হাসপাতালের ৪৮ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন রিলিজ দেয়া হতে পারে। জানা গেছে, সুরাইয়ার শারীরিক অবস্থা মোটামোটি ভাল হলেও তার চোখের ক্ষতটি এখনো রয়ে গেছে। শনিবার জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চক্ষু পরীক্ষা করে বলেছেন, সুরাইয়ার চোখে ট্রমাটিক ক্যাটারেক্ট (আঘাতজনিত ছানি) হয়েছে। তার চোখে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ঢামেক হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর তাকে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করা হতে পারে বলেও জানা গেছে। জাগো নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে ড. শিউলী জানান, সুরাইয়া ভাল আছে, মোটামোটি সুস্থও আছে। তবে অপরিণত বয়সে জন্মগ্রহন, কম ওজন তদুপরি গুলিবিদ্ধ হওয়ায় যে কোনো সময় সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে তার।নবজাতকের চিকিৎসার শুরু থেকেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই চিকিৎসক কয়েকদিন আগে এ প্রতিবেদককে বলেন, সুস্থ অবস্থায় মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারলে খুব খুশী হবো। আজ খুশী কিনা জিজ্ঞেস করলে ডা. শিউলী বলেন, সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় মৃত্যুপথযাত্রী সুরাইয়াকে বাঁচিয়ে তুলে মোটামোটি সুস্থ অবস্থায় মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে তিনি ভীষণ খুশী। গত ২৩ জুলাই মাগুরায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় সুরাইয়া। জম্মের তিনদিন পরই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ হাসপাতালে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার দেহের বিভিন্ন  স্থানে ২৩টি সেলাই পড়েছে। এমইউ/একে/আরআইপি

Advertisement