প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনার্ড ট্রাম্পকে প্রধান অতিথি হিসেবে আসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত, হোয়াইট হাউস তা ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে দিল্লি।
Advertisement
ডোনার্ড ট্রাম্প ভারত সফরে আসবেন কি আসবেন না -বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে সংবাদ মাধ্যমে জানানো নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গেও এ সিদ্ধান্তের সম্পর্ক মেলাচ্ছেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল বিবিসিকে জানান, ‘আসলে অনেক ভালো হতো এই আমন্ত্রণ জানানোর কথা ঘোষণাই না করা হলে। তাহলে জবাবটা ‘না’ হলেও তা নিয়ে কোনো হইচই হতো না। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত আগে অনানুষ্ঠিকভাবে জেনে নেয়া হয়, সেই বিদেশি অতিথি আসতে পারবেন কি না -তারপরই আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠানো হয়। কিন্তু এখানে খবরটা আগেভাগেই ফাঁস হয়েছে এবং বিষয়টা অবশ্যই অন্যভাবে সামলানো উচিত ছিল।’
দিল্লির কূটনৈতিক সংবাদদাতা মাহা সিদ্দিকি জানান, ২৬ জানুয়ারি ভারতে আসতে না-পারার কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্টের ব্যস্ত সময়সূচিকেই তুলে ধরেছে। কারণ, তার মাত্র দ ‘দিন পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেয়ার কথা।
Advertisement
তবে গত দু‘বছরে বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে দেখা গেছে, তাতে দিল্লিরও ধারণা ছিল ভারতের জন্য ট্রাম্প হয়তো কোনো না কোনোভাবে সময় বের করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও লোকসভার এমপি মমতাজ সঙ্ঘমিতা বলেছেন, ‘এত বড় মাপের কোনো রাজনীতিবিদের সেই সময় কোনো ব্যস্ততা বা অন্য কোনো কাজ পড়তেই পারে। তবে আমি যেটা বলবো তা হলো- বাইরে যে ঘনিষ্ঠতা দেখা যায় সেটাই কিন্তু সব নয়! আসলে সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই বোধহয় একটা কথা সত্যি - যেমনটা আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বলি -যে তারা যেমন শত্রু, তেমনি মিত্রও! একই কথা বড় বড় দেশগুলোর ক্ষেত্রেও খাটে।
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আর তা ছাড়া যতই নিবিড় কোলাকুলি হোক, আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেন ওই মাপের নেতারা অত ঘনিষ্ঠ হতে পারেন? না কি হওয়া সম্ভব?’
মোদি-ট্রাম্প আলিঙ্গনের বাইরেও যে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে অনেক সূক্ষ ভাঁজ আছে -তা স্পষ্ট হয়েছিল এ মাসের শুরুতেই। মার্কিন পণ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক বসানোর জন্য ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ভারতকে আক্রমণ করেছিলেন। হার্লে ডেভিডসন বাইক থেকে শুরু করে আরও অনেক মার্কিন পণ্যর ওপর ভারতে একশো শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে নালিশও করেছিলেন ট্রাম্প।
Advertisement
এছাড়া ইরানের ওপর কঠোরতর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চালু হতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। তবে ভারত জানিয়ে দিয়েছে, ইরান থেকে তেল কেনা তারা বন্ধ করতে পারবে না।
ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিক কানওয়াল সিবালার মতে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর বাতিলের পেছনে এটাও অন্যতম কারণ হতে পারে। আমেরিকা যদি সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে এ ধরনের হাই-প্রোফাইল সফরের জন্য যে রাজনৈতিক পরিবেশটা দরকার -তা বিষিয়ে যেতে বাধ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো সে কারণেই হোয়াইট হাউস মনে করেছে এ ধরনের একটা কূটনৈতিক অনিশ্চয়তার আবহে ভারত সফরে যাওয়ার ঠিক আদর্শ পরিস্থিতি নয়!’
প্রতি বছর কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে বিশেষ সম্মান দেখাতেই ভারত আমন্ত্রণ জানায়। সাড়ে তিন বছর আগে বারাক ওবামা স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের সময়সূচি কিছুটা পাল্টে দিয়ে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। তবে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দাওয়াত ফিরিয়ে দেবেন তা দিল্লির কল্পনায় ছিল না।
আরএস/জেআইএম