অর্থনীতি

কৃষি ঋণে আগ্রহ কম বেসরকারি ব্যাংকের

>> বিআইবিএম'র গবেষণা প্রতিবেদন >> কৃষি খাতের ব্যাংক ঋণে বৈচিত্র্য নেই >> ২ শতাংশের কম ঋণ দেয় বেসরকারি ব্যাংক>> কৃষি ঋণে খেলাপি তুলনামূলক কম>> বড় ঋণ নিয়ে ফেরত দেয় না গ্রাহকরা>> গ্রাহকরা ফেরত দেয় কৃষি ঋণ

Advertisement

কৃষি ঋণে তুলনামূলক আগ্রহ কম বেসরকারি ব্যাংকের। কৃষিতে প্রায় ৮ শতাংশ ঋণ দেয় সরকারি ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ খাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের হার ২ শতাংশের কম। যদিও কৃষিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘অ্যাড্রেসিং এগ্রিকালসার থ্রো ভ্যালু চেইন ফাইন্যান্সিং- হাউ টু অ্যাট্রাক্ট ব্যাংকস?’ শীর্ষক কর্মশালায় এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি ২৪টি ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন করেছে বিআইবিএম।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শস্য উৎপাদনে মোট কৃষি ঋণের ৫৯ শতাংশ দেয়া হয়েছে। আর প্রাণিসম্পদ এবং পোলট্রিতে ১০ শতাংশ, মৎস্যে ৯ শতাংশ, দারিদ্র্য বিমোচনে মাত্র ৬ শতাংশ ঋণ দেয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দেয়া হয়েছে এক শতাংশ ঋণ। আর শস্য গুদামজাতকরণে এ হার শূন্যের কোটায়। অর্থাৎ কৃষি খাতে ব্যাংক ঋণে বৈচিত্র্য নেই। এই বৈচিত্র্যহীন ঋণ বিতরণের কারণে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না।

Advertisement

উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষিতে ভ্যালু চেইন ফ্যাইন্যান্সের ওপর জোরারোপ করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ছাড়া কৃষিতে তুলনামূলক খেলাপি ঋণ কম বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরী, প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএম এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান।

এ ছাড়া বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, বেসিক ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ডিএসবিএম) মো. মহিউদ্দিন সিদ্দিকী। গবেষণা দলে বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য ছিলেন শেখ নাজিবুল ইসলাম, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তানভীর মেহদী, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ইসমত কোয়ায়িশ।

Advertisement

ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আলাদা গাইডলাইন আছে, যাতে কৃষি খাতে সঠিকভাবে ঋণ বিতরণ হয়। কৃষি ঋণে ভ্যালু চেইন ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। যাতে দ্রত এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। এ চালিকাশক্তিকে সক্রিয় ও সচল রাখতে হলে ব্যাংকের অর্থায়ন জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঋণ দিতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং রফতানিসহ যাবতীয় বিষয় এখন কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব দিক বিবেচনা করে ঋণ দিতে হবে।

তিনি বলেন, বড় ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে চায় না গ্রাহকরা। আর কৃষি ঋণ ফেরত দেয়। এ জন্য এই খাতে খেলাপির পরিমাণ তুলনামূলক কম।

অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, বড় ঋণের ১০ শতাংশ খেলাপি হয়ে যায়, এটি নিয়ে ব্যাংকগুলোর ভাবনা কম। কিন্তু মোট ঋণের দুই শতাংশ কৃষি ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ধরনের আপত্তি, যা থাকা উচিত নয়।

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব উপখাতেই অর্থায়ন করতে হবে। উৎপাদন, বাজারজাতসহ সংশ্লিষ্ট সব উপখাতকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, কৃষি খাতের চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। বাকি সামান্য চাহিদা কিছু বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। কিন্তু একটি বড় অংশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি ঋণ বিতরণ হচ্ছে ৯ শতাংশ সুদে, কিন্তু ঋণ পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশের বেশি। এ জন্য বছর শেষে মূলধন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যা সরকার পূরণ করছে।

এসআই/জেডএ/এমএস