খেলাধুলা

বিপিএলে যেমন পারফরমেন্স দরকার, আমার তা আছে : শাহরিয়ার নাফীস

আব্দুর রাজ্জাকের ৩৬, শাহরিয়ার নাফীসের ৩৩। এমন নয় যে ক্রিকেটে কখনো তাদের চেয়ে বয়সে বড় ক্রিকেটাররা খেলেননি। বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের চেয়ে অনেক বেশি বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত খেলা এবং ভাল পারফর্ম করার নজির ভুরিভুরি।

Advertisement

ইতিহাস জানাচ্ছে বাংলাদেশেও তাদের চেয়ে বেশি বয়সে ভালো খেলেছেন কেউ কেউ। সবচেয়ে বড় কথা, দু’জনার কেউই একদম হারিয়ে যাননি। এখনো পারফর্ম করছেন। নাফীস জাতীয় লিগের আগের রাউন্ডেই দারুণ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জানান দিয়েছেন আমি এখনো ফুরিয়ে যাইনি।

তবু কঠিন সত্য হলো এবারের বিপিএলে প্লেয়ার্স ড্রাফটে শাহরিয়ার নাফীসকে নেয়নি কোন দল। ঘুরিয়ে বললে ড্রাফটে তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোন দল। নাফীসের চেয়ে অনেক আনকোরা নবীন, অদক্ষ, অপরিণত এবং অনভিজ্ঞ ক্রিকেটার দল পেয়েছেন, অথচ শাহরিয়ার নাফীসের মত ক্রিকেটার দল পাননি। শুধু নাফীস একা নন, দেশের অগণিত ক্রিকেট অনুরাগী এমন মেধাবী, দক্ষ ও সফল বাঁহাতি উইলোবাজ বিপিএলে দল না পাওয়ায় হতাশ ও বিস্মিত।

বিষয়টি কাকতালীয়, অতি কাকতালীয়! দেশের যে দুজন সিনিয়র ও প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার এবার বিপিএলে দল পাননি তাদের দুজন- আব্দুর রাজ্জাক আর শাহরিয়ার নাফীস দুজনই গতবার ছিলেন চ্যাস্পিয়ন রংপুর রাইডার্সে। অবশ্য এর মধ্যে অভিজ্ঞ ও নামী বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও বাঁহাতি টপ অর্ডার শাহরিয়ার নাফীস আট ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।

Advertisement

রাজ্জাক মনে করেন, আগে বার চ্যাম্পিয়ন রংপুরের হয়ে নাম মাত্র সুযোগ পাওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের বার যে ক্রিকেটার মাত্র দুই ম্যাচ খেলেছেন, এবার আর তাকে নিতে কেউ উৎসাহ দেখায়নি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, নাফীসও গতবারের বিপিএলেই ভাল খেলেননি। আট ম্যাচ খেলে সাকুল্যে ১০০’র মত রান করেছেন।

এ অনুজ্জ্বল পারফরমেন্সের কারণেই এবার তাকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি দলগুলো। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে বিপিএলের ইতিহাস-পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ভিন্ন কথা। ২০১৭ সালের বিপিএলে নিজেকে মেলে ধরকে না পারলেও অন্য চার আসরের অন্যতম সেরা ও সফল ব্যাটসম্যানদের তালিকায় মোটামুটি ওপরের দিকেই আছে বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান নাফীসের নাম।

বিপিএলে রান তোলায় তার অবস্থান ১৪ নম্বরে। এখন পর্যন্ত আগের পাঁচ আসরে ৪২ ম্যাচের ৪০ ইনিংস ব্যাট করা শাহরিয়ার নাফীসের সংগ্রহ ৯৩৭ রান। শতরান একটি (১০২), সাথে ছয়টি হাফসেঞ্চুরি। স্ট্রাইকরেট ১০৭.২০। গড় ২৬.৭৭। তবে তিন বিদেশী ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস আর আহমেদ শেহজাদকে বাদ দিলে আগের পাঁচ আসরে রান তোলায় স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার অবস্থান ১১ নম্বরে।

বিপিএলে এখন পর্যন্ত ছয় জন মাত্র ক্রিকেটার ১০০’র বেশী বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। তার মধ্যে মাহমুদউল্লাহ (১১৫), তামিম (১৪৯) ও সাকিবের (১১২) পর শাহরিয়ার নাফীস অবস্থান করছেন চার নম্বরে (১১১ বাউন্ডারি)। রান তোলায় তার চেয়ে ওপরে থাকলেও বাউন্ডারি হাঁকানোয় শাহরিয়ার নাফীসের পিছনে মুশফিকুর রহিম (১০৬) ও ইমরুল কায়েস (১০৯)।

Advertisement

বিপিএলে শাহরিয়ার নাফীসের সবচেয়ে ভাল মৌসুম কেটেছে ২০১৩’তে। ঐ বছর হওয়া দ্বিতীয় আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে একটি শতরান ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩৯৫ রান করে রান তোলায় পঞ্চম স্থান দখল করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। গড় ছিল ৩৫.৯০, স্ট্রাইকরেটও ছিল ১১৭.৯১।

ঐ বার বিপিএলে নিউজিল্যান্ডের ল্যু ভিনসেন্টের সাথে তার একটি অসামান্য কৃতিত্ব রয়েছে। যা এখনো অমলিন। ২০১৩ সালে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার্সের পক্ষে কিউই ওপেনার ভিনসেন্টনকে সাথে নিয়ে প্রথম উইকেটে ১৯৭ রানের বিরাট পার্টনারশিপ গড়েন শাহরিয়ার নাফীস। যে রেকর্ড এখনো অক্ষুন্ন। শুধু প্রথম উইকেটেই নয়, বিপিএলের ইতিহাসে যে কোন জুটিতে সেটাই সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ।

এমন এক প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের প্রতি রংপুরই শুধু নয়, অন্য ছয় দলের কেউ আগ্রহ না দেখালেও এখন পর্যন্ত বিপিএলে তিন-চার ম্যাচ খেলে ৫০ রান করা ফজলে রাব্বি ঠিকই দল পেয়েছেন। তাকে প্রথম দিকেই দলে টেনেছে রংপুর। দল না পেয়ে হতাশ হলেও মুষড়ে পড়েননি শাহরিয়ার নাফীস।

সোমবার দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে অনেক কথার ভীড়ে শাহরিয়ার নাফীস জানান, ‘গত বছর খুব বেশী ভাল খেলিনি। আট ম্যাচে ১০০ রান করেছি। তবে তার আগের তিন বছর টানা ভাল খেলেছি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আশরাফুল ও সাব্বিরসহ যে তিন জন মাত্র ব্যাটসম্যানের বিপিএলে সেঞ্চুরি আছে- আমি তাদের একজন।’

সর্বোপরি এবার প্রতি ম্যাচে একজন করে বিদেশী ক্রিকেটারের কোটাও গেছে কমে (এবার এক ম্যাচে চারজনের বেশী বিদেশী ক্রিকেটার খেলানো যাবে না)। তাই শাহরিয়ার নাফীসের বিশ্বাস ছিল, ঠিক ডাক চলে আসবে। কাল দুপুরের পর থেকে পড়ন্ত বিকেল অবধি যখন হোটেল রেডিসনে প্লেয়ার্স ড্রাফট চলছিল, ঠিক একই সময়ে টিম বাসে করে জাতীয় লিগ খেলতে বরিশাল যাচ্ছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। বাসে বসেই ড্রাফটের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। তার ভাষায়, ‘স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে যখন পঞ্চম ডাকেও আমার নাম আসেনি, তখনই মনে হচ্ছিল এবার বুঝি আর ডাক পাবো না।’

তারপর জানলেন এবারের বিপিএলে প্রথমবার তাকে নেয়নি কোন দল। কেমন লাগলো? ঐ সময়ের অনুভূতি কি ছিল? শাহরিয়ার নাফীসের জবাব, ‘এমন কোনবার হয়নি যে আমি বিক্রি হইনি বা ড্রাফটে ছিলাম না। সত্যি বলতে কি তাৎক্ষণিকভাবে খারাপ লেগেছে।’

শাহরিয়ার নাফীসের ব্যাখ্যা, ‘প্রত্যেকটা দল একটা মোটো বা ভিশন নিয়ে দল করে। হয়ত আমি তাদের প্ল্যানের মধ্যে পড়িনি।’ তবে তার বিশ্বাস, বিপিএল খেলার জন্য যেমন ফর্ম ও অতীত পারফরমেন্স দরকার, তার তা আছে। সে কারণেই মুখে এমন কথা, ‘বিপিএলে যেমন পারফরমেন্স দরকার, আমার তা আছে। রান তোলায় দেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম ১০ জনের মধ্যে (আসলে ১১ নম্বর) আছি। এটা নিশ্চয়ই হেলাফেলার বিষয় নয়। আমার মনে হয় সেটাই কোন দলে জায়গা পাবার জন্য গুড এনাফ। তারপরও বলবো, সিলেকশনের বিষয়টা পুরো টিমগুলোর কাছে। যে বিষয়টা আমার হাতে ছিল না, তা নিয়ে হাপিত্যেশ করে লাভ নেই।’

প্রতিবারই নিলাম কিংবা প্লেয়ার্স ড্রাফট শেষেও অনেক কিছু হয়। আপোষ রফায় দলবদল চলে। ড্রাফটের বাইরে থাকা কাউকেও নেয়া হয়। দেখা গেল কোন শিবিরে হঠাৎ ইনজুরি বাসা বেঁধেছে। একাধিক ক্রিকেটার খেলতে পারবেন না। তাদের বিকল্প হিসেব তখন ড্রাফটে নাম না ওঠা কাউকে নেয়া হয়। এমন উদাহরন আছে ভুরিভুরি।

আপনার বেলায়ও যদি অমন ঘটে, আপনাকে যদি কোন দল দল অফার করে, তাহলে খেলবেন? তার জবাবে নাফীস বলেন, ‘আমি পেশাদার ক্রিকেটার। আমার পেশা খেলা। আমি খেলবো। তবে আমি আমার মর্যাদা রাখবো। এখন যদি কেউ বলে পেটে ভাতে খেলতে, তাতো আর হবে না। আমি আমার সম্মান নষ্ট করতে চাই না। সম্মান নষ্ট করা যাবে না।’

এআরবি/এসএএস/আরআইপি