অর্থনীতি

হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে ৭ বছর কর ছাড়

>> তিন বছর ৭০ শতাংশ কর অব্যাহতির সুপারিশ>> জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে >> ৪০ বছরের জন্য কাজ ও বিনিয়োগের সুযোগ

Advertisement

বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনের শুরু থেকে প্রথম সাত বছর শতভাগ কর ছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তী তিন বছর ৭০ শতাংশ কর অব্যাহতির জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্কসমূহে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদেয় কর সুবিধা বৃদ্ধিপূর্বক এস,আর,ও সংশোধন প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান গত ১৮ অক্টোবর একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠান।

আরও পড়ুন >> ২৮ হাইটেক পার্কে কর্মসংস্থান হবে ৩ লাখ মানুষের

এতে বলা হয়, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বর্তমান বিষয়ে উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত সব আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর থেকে উৎপাদনের সময় হতে প্রথম তিন বছরের জন্য শতভাগ, চতুর্থ বছরে ৮০, পঞ্চম বছরে ৭০, ষষ্ঠ বছরে ৬০, সপ্তম বছরে ৫০, অষ্টম বছরে ৪০, নবম বছরে ৩০ এবং দশম বছরের জন্য ২০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

Advertisement

উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রদত্ত সুবিধাসমূহ পর্যালোচনার জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ২ অক্টোবর গণভবনের সভাকক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎপাদনের সময় থেকে প্রথম সাত বছর শতভাগ এবং পরবর্তী তিন বছর ৭০ শতাংশ কর অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকের সুপারিশ কার্যকর করতে হলে আয়কর আইনে বর্তমানে জারি করা এস,আর,ও সংশোধন প্রয়োজন। এ অবস্থায় উল্লেখিত সুপারিশের আলোকে বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন সংশোধনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন সংশোধনপূর্বক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এসব প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর অবলোকন ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলো।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১০ অনুযায়ী সরকার হাইটেক শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্টকৃত স্থান অথবা সরকার কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত হাইটেক শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তি-উদ্যোক্তা কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত স্থানকে বোঝায়। এছাড়া সরকার কর্তৃক ঘোষিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের জন্য প্রতিষ্ঠিত আইটি পার্ক, আইটি ভিলেজ, টেকনোলজি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, বায়োটেক পার্ক, রিনিউএবল এনার্জি পার্ক, গ্রিন টেকনোলজি পার্ক, হার্ডওয়্যার পার্ক ও সায়েন্স পার্কও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।

Advertisement

অনুরূপভাবে, ‘হাইটেক শিল্প’ অর্থ জ্ঞান ও পুঁজি নির্ভর, পরিবেশ এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি, সফটওয়্যার টেকনোলজি, বায়ো-টেকনোলজি, রিনিউএবল এনার্জি, গ্রিন টেকনোলজি, হার্ডওয়্যার, ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবল্ড সার্ভিসেস (আইটিইএস) এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আর অ্যান্ড ডি) নির্ভর শিল্প।

আরও পড়ুন >> বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপান

সুতরাং হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি পার্কে স্থাপিত কিংবা স্থাপিতব্য শিল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ১.কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, ২. কম্পিউটার সফটওয়্যার, ৩. কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার, ৪. কমিউনিকেশন সফটওয়্যার, ৫. আইটি ভিত্তিক সেবা, ৬. ডিজাইন অ্যান্ড কনসালটেন্সি, ৭. বায়ো ইনফরমেটিকস, ৮. মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, ৯. ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলিং প্রডাক্টস, ১০. অটোমোবাইল অ্যান্ড মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ১১. কৃষি জৈব প্রযুক্তি, ১২. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি।

কাজেই হাইটেক পার্কে ওই সব শিল্প স্থাপনে আগ্রহী যে কোনো ব্যক্তি কিংবা কোম্পানি বিনিয়োগ করতে পারেন।

দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে বেশকিছু হাইটেক পার্ক। ইতোমধ্যে এসব পার্কে বিনিয়োগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এসব পার্কে জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে’ নয়টি কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী ৪০ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে রবি, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেক্ট্রনিকস, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাসডাক টেকনোলজিস ও জেআর এন্টারপ্রাইজ হাইটেক পার্কে কাজ ও বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি। অপারেটরটি এখানে আইটি, আইটিইএস, ডিজিটাল সার্ভিস ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি এবং হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করতে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।

ফেয়ার ইলেক্ট্রনিকসকে তিন একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে তারা ইলেক্ট্রনিকস, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উৎপাদনে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।

এ চুক্তির মাধ্যমে নয়টি কোম্পানি ২০ দশমিক ৫০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হাইটেক পার্কে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগ করবে ১৪০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার।

এছাড়া দেশের হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করতে জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে জাপান-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি বিজেআইটি পুরো উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। এমইউএইচ/এএইচ/এমএআর/এসআর/জেআইএম