সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবি আদায়ে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাহার করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
Advertisement
সোমবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, ঢাকাসহ দেশব্যাপী ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। সরকার এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। আমরা সরকারকে জানান দিতে চাই, সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন না করলে আমরা গাড়ি চালাব না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘এই কর্মবিরতি আমরা বাধ্য হয়ে ঘোষণা করেছি। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার আগে আমরা একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের দাবি-দাওয়া সরকারকে জানিয়েছি। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের দাবি-দাওয়ায় কর্ণপাত করেননি। বরং আমাদের শ্রমিক ভাইদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়া হয়েছে। যে কারণে আজকে কর্মবিরতি চলছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। আমরা সেটা উপলব্ধি করছি। কিন্তু সরকার তো আমাদের কষ্ট, দাবি-দাওয়া উপলব্ধি করছে না। এখন পর্যন্ত সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তাই দেশব্যাপী চলমান ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট এই মুহূর্তে প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।’
Advertisement
ওসমান আলী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আইন পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই বলে গণমাধ্যমে মতামত জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা যেত। আমাদের সঙ্গে বসতে পারতেন। কিন্তু কোনোটাই হয়নি।’ ধর্মঘট শেষে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাতার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কর্মবিরতি চলছে, ধর্মঘট নয়। আমাদের কর্মবিরতির কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। তা দেখে আমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের এই কর্মসূচি নয়। আমরা সরকারকে জানান দিতে চাই-এই আইন থাকলে আমরা গাড়ি চালাব না।’
সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও হত্যা প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে পাস হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। তবে এই আইন না মানার ঘোষণা দিয়ে আট দফা দাবি উত্থাপন করে ধর্মঘটে নেমেছে শ্রমিক ফেডারেশন। বেশ কয়েকটি পরিবহন মালিক সংগঠন শ্রমিকদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। তারা গাড়ি বের না করার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
দ্বিতীয় দিনে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সড়কে চলছে চরম ভোগান্তি। গণপরিবহন বলতে শুধু বিআরটিসির বাস চলছে। আধাঘণ্টা কিংবা ২০ মিনিট পর একটা করে বাস চলতে দেখা গেলেও যাত্রীতে ঠাসা। এর মধ্যেই অনেককে ঝুঁকি নিয়ে উঠতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ।
Advertisement
পরিবহন শ্রমিকদের আট দফা দাবি হলো
১. সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে;
২. শ্রমিকদের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না;
৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে;
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে;
৫. ওয়েটস্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে;
৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে;
৭. গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে;
৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
জেইউ/এসআর/জেআইএম