‘অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। হঠাৎ দেখলে মনে হবে ভুল করে কোন প্রতিষ্ঠানের শো-রুমে ঢুকে পড়েছি। পোড়া রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ডাক্তার, নার্স, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ সব আয়োজন রয়েছে কিন্তু চিকিৎসার জন্য নেই শুধু রোগী। অধিকাংশ সময় বেড ফাঁকা পড়ে থাকে। অথচ আমাদের দেশে ঠিক বিপরীত চিত্র, বার্ন ইউনিট রোগীতে ঠাসা। ১০০ শয্যার হাসপাতালে তিনগুণ রোগী থাকে। তীব্র সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে রোগীরা। আইসিইউ ও ওটি থাকলেও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। আহা আমাদের দেশেও যদি এমন সুব্যবস্থা থাকতো।’ সপ্তাহব্যাপী মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের দুটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে দেশে ফিরে দলপ্রধান ও বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সফরের অভিজ্ঞতা এভাবেই বর্ণনা করেন। দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের দুটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গত ২ আগস্ট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বদরুন নেসা, উপ-সচিব নাসরিন মুক্তি, ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, স্থাপত্য বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আলপনা চাকমা, উপ-প্রধান স্থপতি মঞ্জুরুর রহমান, সহকারী প্রধান স্থপতি এ কে এম মাসুদ পারভেজ ও আনিসুর রহমান।সম্প্রতি দেশে ফিরে জাগো নিউজকে ডা. সেন জানান, মালয়েশিয়ার প্রিন্স কোর্ট ও সিঙ্গাপুরের সরকারি জেনারেল হাসপাতাল দুটি পরিদর্শন করেছেন তিনি। মালয়েশিয়ার হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার বার্ন ইউনিট রয়েছে। সেখানে পোড়া রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আইসিইউ, ওটি, যন্ত্রপাতি সব কিছুর সুব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু নেই কেবল রোগী। পরিদর্শনকালে তারা জানতে পারেন গত দুইমাসেও একজন রোগী ভর্তি হয়নি। এছাড়া সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ১৫ বেডে মাত্র ৩/৪ জন রোগী দেখেছেন তারা। তিনি আফসোস করে বলেন, সেখানে রোগী নেই অথচ আমাদের দেশে পোড়া রোগীর সংখ্যা এতো বেশি যে হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড় থাকে। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার জানান, পরিদর্শনকালে স্থপতিরা হাসপাতালগুলো কোন ডিজাইনে স্থাপিত হয়েছে, হাসপাতালে ভিজিটর কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সংক্রমণ এড়াতে ওটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডাক্তার ও নার্সদের কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের আদলে দেশে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলে বর্তমানে যে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে সেখানকার দুই একর জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য এমডি ও এম.এস উচ্চ ডিগ্রিধারী কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ জন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২ জন। ইনস্টিটিটিউট স্থাপিত হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement