খেলাধুলা

‘প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরির পর মনে হচ্ছিল, যদি একটা সুযোগ পেতাম!’

অনেক বিশ্ব বরেণ্য ক্রিকেটারও নানা সংস্কারে বিশ্বাস করেন। সৌম্য সরকারের তেমন কোন সংস্কার আছে কি না, তিনি কোন রকম সংস্কার মানেন কি না? কিংবা সাতক্ষীরার এ বাঁ-হাতি ওপেনারের আদৌ কোন সংস্কার আছে কি না? তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। তবে নিজের ক্ষমতা থাকলে ঘরের মাঠে হয়ত সৌম্য ঘুরে-ফিরে চট্টগ্রামের সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই খেলতে চাইতেন বেশি।

Advertisement

ইতিহাস জানাচ্ছে, সাগরিকার এই মাঠ সৌম্যর বিশেষ পয়োমন্তঃ। মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে হারিয়ে রান খরায় ভোগা সৌম্য ওয়ানডেতে শেষবার ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই।

তিন বছর আগে, ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ বলে ১৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে টিম বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হয়েছিলেন সৌম্য সরকার। অবশ্য সে ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য আজকের মত অত বড় ছিল না।

ওই ম্যাচে মাশরাফি বাহিনীর দরকার ছিল ১৬৯ রানের। সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৯ উইকেটের অনায়াস জয় পায়। জয়ের বন্দরে পৌছে যেতে ১৪৩ বল আগে।

Advertisement

আজ ঠিক উল্টো চিত্র। সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েসের জোড়া শতরানে জিম্বাবুয়ের করা ২৮৬ রান টপকে ৭ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের। খেলা শেষ হয়েছে ৪৭ বল আগেই।

ওই বড়সড় স্কোর টপকাতে সৌম্যর ঝড়ো উইলোবাজি (৯২ বলে ৬ ছক্কা ও ৯ বাউন্ডারিতে ১১৭) রেখেছে সবচেয়ে বড় অবদান। তার সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ২২০ রানের বিরাট পার্টনারশিপ তৈরি এবং ম্যাচের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান হয়েও ইমরুল নন, ম্যাচ সেরা হলেন সৌম্য।

উল্কার বেগে শুরু। পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, তারপর তার সামর্থ্য নিয়ে কথা নেই। সবার জানা, বুক ভরা সাহস আর আক্রমনাত্মক শটস খেলার পর্যাপ্ত প্রতিভা আছে সাতক্ষীরার এই ব্যাটসম্যানের; কিন্তু মাঝে রান খরায় ভুগতে শুরু করেন।

রান করতেই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। শেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে তিন জাতি আসরে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৭ সালের ১৯ মে হাফ সেঞ্চুরি, ৬৮ বলে ১১ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ৮৭ রানের হার না মানা ইনিংসই শেষ।

Advertisement

তারপর আর পঞ্চাশ বহুদুরে, রান করতেই যেন ভুলে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। পরের ৮ ইনিংসে ০+২৮+৩+৩+০+৮+০+৩৩ = মোটে ৭৫। সর্বোচ্চ ৩৩। আর তিন তিনটি শূন্য। এমন খারাপ অবস্থায় প্রথমে ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ডে যাওয়া, তারপর খুলনার হয়ে জাতীয় লিগে সেঞ্চুরি (রাজশাহীর বিপক্ষে ১০৩*) করে রান করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত।

সেটাই শেষ নয়। বিকেএসপিতে গত ১৯ অক্টোবর এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেই সৌম্য জানান দিয়েছেন, ঢের হয়েছে। খারাপ সময় কাটিয়েছি অনেক। শনির দশা কাটিয়ে আবার বৃহস্পতি তুঙ্গে আসার সময় এলো বলে। পুজোর ছুটি বাদ দিয়ে চার দিনের ম্যচ খেলে রাতে ঢাকা এসে পরদিন ভোরে দারুণ শতরানে শুধু মাঠই মাতাননি সৌম্য, জানান দিয়েছেন এই সিরিজ খেলার জন্য তৈরি আমি।

‘বিসিবি একাদশের হয়ে সেঞ্চুরির পর বার বার মনে হয়েছে ইস যদি এ সিরিজে আবার সুযোগ পেতাম!’- আজ খেলা শেষে প্রেস মিটে সে কথা বললেনও। তিনি বলেন, ‘এটা মনে হয়েছে যেদিন আমি, অনুশীলন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম সেদিন রাতে। দিন শেষ খেলার পর যখন জাতীয় লিগ খেলতে খুলনা ফিরছিলাম, তখন এই চিন্তা এসেছিল। ইস! তিনটা ম্যাচ যদি খেলার সুযোগ পেতাম, তাহলে নিজেকে মেলে ধরার, প্রমাণ করার একটা ভাল সুযোগ পেতাম। এমন একটু মনে হয়েছিল। তবে শেষ ম্যাচ যখন ডাক পড়ল, তখন খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, না, একটা সুযোগ এসেছে, দেখি কাজে লাগাতে পারি কিনা।’

আজ রাতে দারুণ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত সে সুযোগটা বেশ ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছেন সৌম্য। তবে কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। গা গরমের ম্যাচে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দারুণ শতরান উপহার দিলেও সেটা ছিল প্রস্তুতি ম্যাচ।

ভিতরে চাপ থাকার কারণ ছিল যথেষ্ট। এক ম্যাচের জন্য জাতীয় লিগ খেলা অবস্থায় উড়িয়ে আনা। খারাপ খেললে আবার সেই জাতীয় লিগ খেলতেই চলে যেতে হবে। আবার কবে ডাক আসবে কে জানে? এমন অবস্থা কিন্তু ছিল।

সৌম্যও তা জানতেন খুব ভাল করে। তাইতো আজকের ম্যাচে যতটা সম্ভব চাপমুক্ত হয়ে খেলেছেন। বারবার ভেবেছেন, মাঝে খারাপ সময় কাটিয়েছি। খারাপ খেলেছিও। রান পাইনি। এখন বেশি চিন্তা করলে, বাড়তি চাপ নিলে হয়ত আরও খারাপ হতে পারে। তারচেয়ে বোশ কিছু না ভেবে চেষ্টা করেছেন চাপমুক্ত থাকতে।

সৌম্য বলেন, ‘আজ আসলেই আমার কোন বাড়তি চিন্তা ছিল না। আমি চিন্তা করেছি, আজ যদি খারাপ খেলি হয়তো খারাপই হবে। খারাপ সময়ই যাচ্ছিলো, আজও যেতে পারত। ওই জিনিস নিয়ে ভাবিনি, খারাপ যাচ্ছে, আরেকটা ম্যাচ যাবে, এইতো। সমস্যা নেই। আরও কিছু কথা বাড়বে, সমস্যা কি আর হবে। তাই অত সাত-পাঁচ না ভেবে চেষ্টা করেছি নিজের খেলাটা খেলতে। জানতাম ভাল হলে বাহবা মিলবে। খারাপ হলে সবাই খারপা বলবে।’

এআরবি/আইএইচএস