প্রবাস

বিশ্ব জয়ের পথে নাজমুন নাহার

বাংলাদেশের পতাকা হাতে প্রথম বিশ্বজয়ী নারী পরিব্রাজক নাজমুন নাহার। আজারবাইজান সফর শেষে নাজমুন এখন ইরানে পৌঁছেছেন। তার ভ্রমণকৃত দেশের সংখ্যা ১১০। ইরানের পথে পথে এবার উড়বে লাল সবুজের পতাকা। সম্প্রতি তিনি ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছান।

Advertisement

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাজমুন নাহার

‘এক পৃথিবী, এক পরিবার’- এ স্লোগানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে শান্তিময় পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি নাজমুন বাংলাদেশের পতাকাকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যোগ হয়েছে সম্প্রতি ভ্রমণ করা আজারবাইজানের জীবন, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির কথা।

১৭ অক্টোবর বুধবার বিকেলে স্টকহলম থেকে বাল্টিক এয়ারের ফ্লাইটে তিনি আজেরবাইজান যান। বাকু শহর থেকেই শুরু হয়েছে তার যাত্রা। তার অনাবিল উৎসাহে লাল সবুজের পতাকা ছুঁয়ে যাচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতা। লাল সবুজের পতাকাকে বুকে করেই তিনি অবিরাম ছুঁটছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

Advertisement

তেহরান আজাদী টাওয়ারের সামনে নাজমুন নাহার

বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নাজমুন নাহার। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে আলোচিত নারী হয়ে ওঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী।

২০০০ সাল। বিশ্ব ভ্রমণের প্রথম যাত্রা। ভারতের পাঁচামরিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন নাজমুন। বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধমে বিশ্ব শান্তি ও একাত্মতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এরপর থেকে নাজমুন পৃথিবীর এক এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলছেন। দেশ ভ্রমণে তরুণদের নানাভাবে উৎসাহিত করছেন।

২০১৭ সালে ৯৩ তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নিউজিল্যান্ড। এই দুর্দান্ত সাহসী নারী একে একে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছান সর্বোচ উচ্চতায়। ২০১৮ সালের ১ জুন নাজমুন ১০০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে।

Advertisement

দেশের পতাকা হাতে শততম দেশে বাংলাদেশের নাজমুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। পরে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যান সুইডেনে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এক আদর্শ পরিবারের ছোট সন্তান হিসেবে নাজমুনের বেড়ে ওঠা ছিল ভিন্নরকম।

পারিপার্শ্বিক বাধাবিঘ্ন থাকলেও নিজের ভেতরে বড় বড় স্বপ্ন ধারণ করায়, পড়ালেখায় একাগ্রচিত্ত থাকায় এবং এক লড়াকু বাবার ছায়াতলে বেড়ে উঠা নাজমুনকে কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাবার উত্সাহ ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বই পড়ার প্রচণ্ড নেশা ছিলো নাজমুন নাহারের।

এক্ষেত্রে বাবার অবদান বেশি। বাবাই কিনে দিতেন বই। সব ধরনের বই পড়তেন। তবে ভ্রমণবিষয়ক বইয়ে ঝোঁক একটু বেশিই ছিল। তা পাঠ্যবইয়ের ভ্রমণ কাহিনি হোক কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো ভ্রমণ কাহিনি হোক।

নাজমুন আজ দেশ প্রেমের এক জ্বলন্ত প্রতীক। আমাদের তরুণ জাগরণের এক নতুন পথিকৃত। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের শিশুদের স্বপ্ন গড়ার উদাহরণ। তিনি বিশ্বাস করেন স্বপ্ন দেখলে আর তার জন্য কাজ করলে পৃথিবীতে সবই সম্ভব। তাইতো তিনি সব অসম্ভবকেই জয় করে দেখিয়েছেন তার স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে।

তিনি বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘ইন্সপেরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে তিনি তার এই উদ্যোগকে বাংলাদেশে শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকে তাদের স্বপ্নের যাত্রা পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে যাবেন। নাজমুনের এই অগ্রযাত্রার ভাবনা আলোকিত করবে আমাদের অনেক মানুষকেই।

এমআরএম/পিআর