খেলাধুলা

টিম হোটেলে সিরিজ জয়ের কোন আমেজই নেই

স্থায়ী নিবাস না হলেও খেলার কারণে এখন জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারের সাময়িক ঠিকানা ঢাকা। সে অর্থে নড়াইলের মাশরাফি, মাগুরার সাকিব, চট্টগ্রামের তামিম, বগুড়ার মুশফিক, ময়মনসিংহের মাহমুদউল্লাহ, সাতক্ষীরার মোস্তাফিজ, মেহেরপুরের ইমরুল, দিনাজপুরের লিটন দাস আর খুলনার মিঠুন- এখন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। বছরের বড় সময় তাদের রাজধানীতেই কাটে।

Advertisement

এই সব তারকা ও সেলিব্রেটিরা যখন ঢাকার বাইরে খেলতে যান, তখন তাদের নিয়ে রাজ্যের উৎসাহ-আগ্রহ ও উদ্দীপনা থাকে ভক্তদের। সবাই কাছে আসতে চান। তাদের সাথে দাড়িয়ে ছবি তোলার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম-খুলনায় অবস্থানকালীন সময়ে টাইগারদের টিম হোটেলের বাইরে, হোটেল লবি ও তার আশপাশে একটা ছোট খাট জনসমাবেশ থাকে প্রায় সর্বক্ষণ। প্রিয় ক্রিকেটারকে একনজর খুব কাছ থেকে দেখার অভিপ্রায়েই টিম হোটেলে যান অনেকে। সম্ভব হলে তার পাশে দাড়িয়ে ছবি তোলা আর অটোগ্রাফ নেয়ার আগ্রহটাও থাকে বেশ।

আর ঘরের মাঠে প্রিয় জাতীয় দল কোন সিরিজ জিতলে তো কথাই নেই। টিম হোটেল হয়ে ওঠে আনন্দ-উল্লাস আর উৎসবের ক্ষেত্র। নিশ্চয়ই ভাবছেন কাল রাতে জিম্বাবুয়েকে অতি সহজে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিতের পর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের টিম হোটেলেও বুঝি আনন্দের বন্যা আর খুশির ফলগুধারা বয়ে গেছে।

Advertisement

আর অত রাতে না হলেও আজ সকাল থেকেই বাংলাদেশ দল যে হোটেলে আছে, সেই পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে বুঝি উৎসাহি ক্রিকেট অনুরাগী ও ভক্তেরর উপচে ভিড়। বাস্তবে তার কিছুই নেই। আগের দিন সাগরিকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পরও কোনো উৎসব হয়নি দর্শকদের মাঝে। কিছু উচ্ছাস-উল্লাস পরিলক্ষিত হলেও উৎসবের ছিটেফোঁটাও ছিলো না। টাইগারদের শরীরি অভিব্যক্তিতেও দেখা যায়নি কোনো বাড়তি উচ্ছাস। উৎসবে মেতে ওঠার তো প্রশ্নই ওঠে না।

টিম হোটেলে গিয়ে বোঝার উপায় নেই। টিম বাংলাদেশ চট্টগ্রামে এখন যে হোটেলে আছে সেই র্যাডিসন ব্লুর বিশাল লবিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি কোনো উৎসবের আমেজ। ক্রিকেটারদের বড় অংশ- মানে কাল যারা খেলেছেন, তাদের সবাই যার যার রুমে। শুধু অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে হোটেল লবিতে বসে কথা বললেন। স্বভাবসুলভ আড্ডা দিলেন। চা খেলেন। এছাড়া আর কারো দেখা মেলেনি। তারা কেউ হোটেল রুম থেকে নীচেও নামেননি।

শুধু যে চারজন একটি ম্যাচও খেলেননি, সেই নাজমুল হোসেন শান্ত, আরিফুল হক, রুবেল হোসেন, আবু হাদার রনি আর সদ্য দলের সাথে যোগ দেয়া সৌম্য সরকার- এই পাঁচজন দুপুরে ঐচ্ছিক প্র্যাকটিসে চলে গেলেন মাঠে। লজিস্টিক ম্যানেজার দেবব্রত পাল তাদের নিয়ে টিম বাসে করে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গেলেন। সাথে অন্য কোচিং স্টাফরাও গেলেন।

সেটাও নিরবে-নিভৃতে। হই চই বহুদুরে। বাড়তি প্রাণচাঞ্চল্যও নেই। আগে থেকে না জানলে বোঝার উপায় নেই এই হোটেলেই আছেন মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল, লিটন, মিঠুন, রুবেল, মোস্তাফিজ , মিরাজরা।

Advertisement

অন্য সময় ঢাকার বাইরে কোন সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ হলে বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের বড় অংশ উড়ে আসেন। সিরিজ নিশ্চিতের পর রাতে পার্টি হয়, পরদিনও তার রেশ থাকে। কাল তার কিছুই হয়নি। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে হয়েছে। যে কারণে বোর্ড সভাপতি ও সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন চট্টগ্রামেই আসতে পারেননি।

বোর্ড প্রধান না আসায় ঢাকা থেকে পরিচালকদের যে বিশাল বহর আসেন, তারাও সে অর্থে আসেননি। পুরো হোটেলে বোর্ড কর্তা বা পরিচালক বলতে দেখা মিললো আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি আর আকরাম খানের। এরমধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান এ সিরিজে ক্রিকেট ম্যানেজার। তাই কাজীর দেউড়িতে নিজ বাসা বাদ দিয়ে তিনি টিম হোটেলে। দুপুরে স্ব-স্ত্রীক কাজীর দেউড়িতে নিজ বাড়ি ও কাছেই শশুরবাড়ি ঘুরতে বেড়িয়ে গেলেন আকরাম খান ও তার স্ত্রী।

হোটেল লবিতে তিন ঘন্টার বেশি সময় থেকে একটা ধারণা জন্মালো। তাহলো জিম্বাবুয়ের এই দলের বিপক্ষে সিরিজ বিজয় এখন আর কোন উৎসবে উপলক্ষ নয় টাইগারদের। হোটেলের পরিবেশ এবং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা বার্তায় মিললো একটা পরিষ্কার বার্তা- তাহলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ বিজয় আসলে অবশ্য করণীয় কাজ। যা করার মধ্যে নেই কোন বড়সড় কৃতিত্ব। বরং করতে না পারাই হতো ব্যর্থতা। পরিষ্কার হলো, শুধু দুজনার; অস্বাভাবিক বা বড় কিছুই হয়নি। ভাবটা অনেকটা এরকম- যা হবার তাই হয়েছে।

শুধু টিম বাংলাদেশের আচরণই পাল্টায়নি। মিডিয়ায়ও এবারের সিরিজ জয়কে খুব বড়-সড় কৃতিত্ব বলে ধরা হচ্ছে না। অন্য সব সিরিজ বিজয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফির সাথে আলাপের শুরুতেই প্রশ্ন ওঠে , ক্যাপ্টেন (কেউ অধিনায়ক মাশরাফি কিংবা ম্যাশও বলেন) সিরিজ বিজয়ের অনুভুতি কি? প্রতিক্রিয়া কেমন?

আজ দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে মাশরাফির কথোপকথনে একবারের জন্যও সিরিজ জয়ের প্রসঙ্গ এলো না। অধিনায়কের চোখ-মুখ বা অভিব্যক্তিতে বোঝাই যায়নি সিরিজ জেতা হয়ে গিয়েছে বা এমন কিছু। এর বদলে খুঁটিনাটি দিকগুলো নিয়েই কথা হলো। যার পরতে পরতে ছিল ভবিষ্যতে ভাল করার কথা। বিশ্বকাপ ভাবনা। সম্ভাব্য স্কোয়াড নিয়ে চিন্তা, সাইফউদ্দিনের ভালো বোলিং, ওপেনারদের রানে থাকা এবং শেষ ম্যাচে ইমরুল কায়েস আর লিটন দাসের শতরানের দোরগোড়ায় গিয়েও তা ছুঁতে না পারা নিয়েই যত কথা মাশরাফির।

এআরবি/জেআইএম