কী অসাধারণ এক ম্যাচ! কী অসাধারণ নাটকীয়তা। নাটকের চেয়েও নাটকীয় কোনো ম্যাচ হলে সেটা উপহার দিয়েছে ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশাখাপত্মমে। ভারতের করা ৩২১ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও করলো ৩২১ রান। ম্যাচ হয়ে গেল টাই। এই স্কোর এবং পরিসংখ্যানে অবশ্য কিছুই বোঝা যাবে না শেষের নাটকীয়তা।
Advertisement
শেষ ওভারেই যা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। উইকেটে ছিলেন ১১৬ রান করা সাই হোপ আর ৩ রান করা অ্যাসলে নার্স। প্রথম তিন বলে ৭ রান নিয়ে ফেলেছিলেন নার্স আর হোপ। চতুর্থ বলে অ্যাসলে নার্স উইকেট দিয়ে বসেন আম্বাতি রাইডুর হাতে।
শেষ দুই বলে প্রয়োজন ৭ রান। সাই হোপ স্ট্রাইকে। পঞ্চম বলে তিনি নিলেন ২ রান। আবারও স্ট্রাইকে। ১ বলে প্রয়োজন ৫ রান। বাউন্ডারি মারলে হবে টাই। ছক্কা মারলে জিততে পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাই হোপ পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারিই মেরে দিলেন এবং ম্যাচ হয়ে গেল টাই।
ইতিহাসের কী আশ্চর্য এক পুনরাবৃত্তি। ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যেদিন শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারের শততম সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেদিন জিততে পারেনি ভারত। হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশের কাছে। শচীন এখন অবসরে। তার পতাকা বহন করে চলেছেন বিরাট কোহলি। শচীনের চেয়েও অনেক বেশি তেজি ঘোড়া কোহলি।
Advertisement
যে কারণে দেখা যাচ্ছে শচীনের চেয়ে ৫৪ ইনিংস কম খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বিরাট কোহলি। শচীনের যেখানে লেগেছিল ২৫৯ ইনিংস। সেখানে বিরাট কোহলি ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ২০৫ ইনিংসে। বিশাখাপত্মমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ সেই মাইলফলকে পৌঁছালেন কোহলি।
অথচ, তার এই ইতিহাস গড়ার দিনে জিততে পারলো না ভারত। মূলত বিরাট কোহলির ভারতকে জিততে দিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোহলি শুধু ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছেই থেমে যাননি। নিজে ছিলেন ১৫৭ রানে অপরাজিত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কোহলির অসাধারণ ইনিংসের ওপর ভর করে ভারত সংগ্রহ করেছিল ৩২১ রান।
ভারতীয় বোলাররা পারলো না এই ৩২১ রানকে রক্ষা করতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ছুঁয়ে ফেলে ভারতের এই বিশাল স্কোর। তবে, মজার বিষয় হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঠিক ৩২১ রানই করেছে। পারেনি আর একটি রান বেশি করতে। ফলে ম্যাচটিতে কেউ জিতলো না। হারেওনি কেউ। যদিও, এমন শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে কেউ না জিতলেও জিতে যায় ক্রিকেট।
ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ৩২২ রানের জবাব দিতে নেমে কাইরণ পাওয়েল আর চন্দরপল হেমরাজ শুরুতে ভালো কিছু উপহার দিতে না পারলেও অন্যরা দলকে টেনে নিয়ে যান অনেক দূর। মারলন স্যামুয়েলসও (১৩) ছিলেন ব্যার্থ। তবে সাই হোপ আর শেমরন হেটমায়ার মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে যান জয়ের পথে। ৬৪ বলে ৯৪ রান করে হেটমায়ার আউট হয়ে গেলেও সাই হোপ ছিলেন আরও বিধ্বংসী।
Advertisement
৬৪ বলে খেলা হেটমায়ারের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪টি বাউন্ডারি আর ৭টি ছক্কার মারে। সাই হোপ শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই ছিলেন। ১৩৪ বলে তিনি খেলেন ১২৩ রানের ইনিংস। রোভম্যান পাওয়েল নেন ১৮ রান। জ্যাসন হোল্ডার নেন ১২ রান। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করতে সক্ষম হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আগের ম্যাচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ৩২২ রান। যদিও, ৪৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল কোহলির ভারত। ওই ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি এবং রোহিত শর্মা।
আইএইচএস/বিএ