মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাজপথে বসেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তাদের মনে আজ বড় কষ্ট, জীবনের ঝুঁকি যে দেশ তাদের উত্তরসূরীরা স্বাধীন করেছিলেন, তাদের সন্তানদের এখন রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। কারণ, দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য থাকা মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেয়া হয়েছে। তাই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে এখন তারা রাস্তায়।
Advertisement
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামক সংগঠনটির নেতৃত্বে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মুখে কাপড় বেঁধে কর্মসূচি পালন করেন তারা।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার প্রজ্ঞাপন জারির প্রতিবাদে তাদের এই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, কখনও ভাবতে পারিনি, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আমাদের রাস্তায় বসতে হবে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল উপহার। এটা হঠাৎ করে হারিয়ে গেল। আজ মনে বড় কষ্ট। এ কষ্ট বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা চাই, এই কোটা আবার ফিরে আসুক।
তারা আরও বলেন, প্রশাসনের মধ্যে যারা ঘাপটি মেরে আছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা রাজপথে আছি, থাকব। আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখতে হবে।
Advertisement
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সালমান মাহমুদ জসীম, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী মো. এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক কাজল, কেন্দ্রীয় নেতা মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আজ ব্যথিত, মর্মাহত, লজ্জিত ও বাকরুদ্ধ। আমাদের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করেছেন। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী সময়ে এ কোটা বাস্তবায়িত হয়নি। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ’৯৬-২০০১ ও ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি নিশ্চিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান তিনিই দিয়েছেন। সেজন্য মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তার কাছে চিরঋণী। কিন্তু সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তাতে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মনঃকষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তাই আমরা তাকে আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং শেখ হাসিনাকে অধিষ্ঠিত করতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। আমরা আজ ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারবো না। তাই কোনো কথা বলবো না। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অশুর শক্তি পরাজিত হবেই।
এএস/জেডএ/এমএস
Advertisement