আন্তর্জাতিক

বাদশাহ ও যুবরাজের দিকে করুণ চাহনি খাশোগির ছেলের

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি প্রাসাদে তারা সাক্ষাৎ করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এ খবর জানিয়েছে।

Advertisement

খবরে বলা হয়, রিয়াদে ইমামা প্রাসাদে খাশোগির ছেলে সালাহ ও তার ভাই সাহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান । এ সময় বাদশাহ ও যুবরাজ তাদের সান্ত্বনা দেন।

এর আগে সোমবার জামাল খাসোগির ছেলেকে ফোন করে কথা বলেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময় নিহত খাশোগির ছেলে সালাহকে সান্ত্বনা দিয়েছেন তিনি।

ডেইলি মেইলের প্রতিবদেনে বলা হয়, সাক্ষাতের সময় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন খাশোগির সালাহ বিন জামাল খাশোগি। এ সময় তার চোখে-মুখে তীব্র কষ্টের ছাপ ফুটে ওঠে। তিনি যেন অনেক না বলা কথা বলতে গিয়েও বলতে পারেননি। যুবরাজের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সময়ও তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ।

Advertisement

শারীরিক ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাক্ষাতের সময় সালাহর শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বলছে তিনি যেন এ সাক্ষাতের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে তীব্র মানসিক পীড়া ও অন্তর্নিহিত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে-অনেকটা মনে কষ্ট নিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু করলে যা হয়। এমনকি হ্যান্ডশেক করার সময় সচরাচর যে আন্তরিকতা ফুটে ওঠে তা তার মধ্যে ছিল না। অনেকটা গা-ছাড়াভাবে হ্যান্ডশেক করেছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাক্ষাতে সময় খাশোগির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে মাথা কিছুটা নিচু রাখেন যুবরাজ সালমান। তিনি উন্মুক্তভাবে হ্যান্ডশেক করেন এবং সেটা ছিল ভদ্রোচিত। তবে হ্যান্ডশেকের সময় পেশীতে সচরাচর যে ছন্দ ঘটে, সেটা তার মধ্যে ছিল না। এটার কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছেন শারীরিক ভাষা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, হ্যান্ডশেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণে সালাহ যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখাতে পারেননি। তার মধ্যে সে মনোভাবও ছিল না। আর এই কারণেই হয়তো যুবরাজ নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।

খাশোগির পরিবারের একজন শুভাকাঙ্ক্ষির বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত খাশোগি যেন দেশে ফিরে আসেন, সেজন্য চাপ প্রয়োগ করতে গত বছর তার পরিবারের প্রতি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি সরকার।

এদিকে সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহের টুকরো অংশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসাল জেনারেলের বাসভবনের বাগান থেকে খাশোগির লাশের টুকরো অংশ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হত্যার পর খাশোগির লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। খাশোগির মুখমণ্ডল বিকৃত করে ফেলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে স্কাই নিউজ। তবে স্পষ্ট করে সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া কীভাবে খাশোগির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরু থেকেই তুরস্ক দাবি করছিল, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি ঘাতক টিমের সদস্যরা হত্যা করেছে এবং তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে কোথাও ফেলে দিয়েছে।

গত বছর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার পর থেকেই রোষানলে পড়েন ৫৯ বছর বয়সী খাশোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লিখেছিলেন খাশোগি। অভিযোগ রয়েছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

এসআর/আরআইপি