খেলাধুলা

সেই জিম্বাবুয়ে আর এই জিম্বাবুয়ে এক নয় : মাশরাফি

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে থেকে এবার দুটি কথা অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে। ক. ম্যাড়ম্যাড়ে সিরিজ। খ. মোটিভেশন। বারবার বলা হচ্ছে, আগের চেয়ে অনেক দুর্বল, কমজোরি, অনুজ্জ্বল ও নিষ্প্রভ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এটা এক অনাকর্ষণীয়, ম্যাড়ম্যাড়ে সিরিজ।

Advertisement

সব হিসেবে পিছিয়ে থাকা এমন দূর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আকর্ষণহীন সিরিজে টাইগাররা ভাল খেলতে কতটা উৎসাহী, উদ্যমী এবং প্রত্যয়ী? বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোর সাথে সমান তালে লড়াই করা আর এই মাস খানেক আগে এশিয়াকাপে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বিশ্বের সেরা দল ভারতের ভীত কাঁপানো মাশরাফির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে কতটা উদ্যমী? ভাল খেলার তাগিদই বা কতটা?

ক্রিকেটীয় পরিভাষায়, সত্যিকার মোটিভেশন বলতে যা বোঝায়, টিম বাংলাদেশের মাঝে তা আছে কতটা? ২০ অক্টোবর দুপুরে সিরিজ শুরুর আগে শেরে বাংলায় জনাকীর্ন সংবাদ সন্মেলনেও প্রায় একই প্রশ্ন উঠেছিল। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেও ঘুরে-ফিরে একই প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি।

মঙ্গলবার বন্দর নগরীতে সূর্য্য যখন মধ্যাকাশে, ঠিক তখন সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ব্যস্ত টিম বাংলাদেশ। কথা ছিল প্র্যাকটিস শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন টাইগার অধিনায়ক। সেটা হবে মাঠের উত্তর দিকের মিডিয়া ভবনের কনফারেন্স হলে।

Advertisement

কিন্তু শেষ অবধি আর ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন হলো না। মাশরাফি স্বদেশি সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেন গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সামনে সাইট স্কিনের নীচে মানে মাঠে বসেই। ১৪ মিনিটের খোলামেলা আলাপে অনেক প্রশ্নই উঠলো। তার একটি হলো, এক সময় মানে জিম্বাবুয়ের যখন সব হিসেবে-নিকেশে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো দল ছিল, তখনো আপনি খেলেছেন। দেখেছেন। আর এখনও বাংলাদেশ ফেবারিট আর জিম্বাবুয়ে আন্ডারডগ। এখনো খেলছেন, দেখছেনও। দুয়ের পার্থক্যটা আসলে কি?

এখনকার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসলে টিম বাংলাদেশ কতটা উদ্যমী? ভাল খেলতে, সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে কতটা মোটিভেটেড? লম্বা-চওড়া প্রশ্ন। মাশরাফি উত্তর দিলেন অনেক গুছিয়ে। অনেক কথার ভিড়ে কিছু কথা বললেন সরাসরি। প্রথম কথা, ‘আসলে প্রতিপক্ষ চিন্তা করে খেলা কঠিন।’

দ্বিতীয় তাৎপর্যপূর্ণ কথা হলো, ‘সব মিলে আমার কাছে মনে হয়, ওই সময়ের জিম্বাবুয়ে দল এক রকম ছিল। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটও পেশাদারিত্বের সূচনার প্রকৃত সময় এটা। দুয়ের মাঝে পার্থক্য আছে অবশ্যই।’

মাশরাফির অনুভব-উপলব্ধি, ‘তাই বলে ভাল খেলার তাগিদ কম থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। তাগিদ আছে পুরোপুরি ভালো করার।’ এটুকু বলে মাশরাফি একটু অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়ে বসলেন।

Advertisement

বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘জিম্বাবুয়ে ভারত, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানের চেয়ে দূর্বল ঠিক আছে। তাই বলে তাদের সাথে খেলতে নামলেই পারফরম্যান্স আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে, এমন নয়।’

বিষয়টির বিন্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘দেখেন মুশফিক এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার সাথে প্রায় দেড়শো (১৪৪) মেরে এসেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও প্রায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল (৯৯)। এখন জিম্বাবুয়ে তো ওই দুই দলের চেয়ে আরও দূর্বল, কমজোরি। এখন কেউ যদি ভাবেন, মুশফিক এখানে জিম্বাবুয়ের সাথে দুইশো করবে, তা কি হয়? ক্রিকেট খেলা তো আর এভাবে হয় না। আপনি একটা দুর্বল দলের সাথে একটা অতি সাধারণ ডেলিভারিতেও আউট হয়ে যেতে পারেন। আসলে প্রতিপক্ষ কমজোরি হলেই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের গ্রাফ অনেক ওপরে থাকবে, খুব বেশি উজ্জ্বল হবে, তা ভাবার কোনই কারণ নেই। তাহলে তো মোস্তাফিজেরও পাঁচটি-ছয়টি করে উইকেট পাবার কথা।’

প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে সম্পর্কে মাশরাফির শেষ কথা, ‘এখন হয়তো জিম্বাবুয়েকে আপনারা ওভাবে দেখছেন, চিন্তা করছেন। আমরা ওভাবে চিন্তা করছি না। কোনো জায়গা থেকে ছোট করছি না। তাদেরকে কোনো জায়গা থেকে ছোটো করার সুযোগ নেই। তারা সব সিনিয়র খেলোয়াড়রাই এসেছে। জিম্বাবুয়ে সেরা খেলা খেললে আমাদের জন্য কঠিন হবে। সুতরাং, আমরা সত্যিকারার্থে এশিয়া কাপে যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছি, সেই মানসিকতা নিয়েই এখানে খেলছি। কোনো যেন ভুল না করি। এখানে আমরা হংকংয়ের সাথেও হেরেছিলাম। তাই কোনো সুযোগ দিতে চাই না।’

মোটকথা, মাশরাফি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন, জিম্বাবুয়ের বর্তমান শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে তারা পুরোপুরি সচেতন। তারা জিম্বাবুয়েকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই ভাবছেন। তাদের শক্তি কম না বেশি? তা নিয়ে চিন্তার চেয়ে পেশাদার মানসিকতাটাই কাজ করছে বেশি। সেখানে প্রতিপক্ষের শক্তি-সামর্থ্যের চেয়ে নিজেদের করণীয় কাজগুলো ভালোমত করতে পারার তাগিদটাই মূল।

সেদিক থেকে চিন্তা করলে ‘ভাল খেলার তাগিদ কম, নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দেয়ার প্রত্যয়ে ঘাটতি নেই একটুও। ‘মোটিভেশন’ কম থাকার প্রশ্নই আসে না। পুরো দল মোটিভেটেড। জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নেবার কোনই কারণ নেই। বরং টাইগাররা ভাল খেলতে মুখিয়ে আছে। নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে দৃঢ় সংকল্পব্ধ।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস