মতামত

নদী, ভালোবাসা পুষে রাখে বুকে

মনে ও মগজে প্রায়ই নদীর চলাচল টের পাই। সেই নদীর, যে নদীতে আমরা কাটিয়েছিলাম জীবনের হলুদ এক বিকেল। নাম জানি না সে নদীর, রূপ জানি! বাংলার প্রায় ২৪,১৪০ কিলোমিটার জুড়েই তো সেই রূপ, সুরের ধারা। আমার সেই বিকেল সুখই হয়ত নদীর কাছে চিরঋণী করে রাখে আমাকে। তাই নদীর কথা ভাবি।

Advertisement

আমরা জলের মানুষ, আমাদের সকল কিছুই নদীকেন্দ্রিক। নদী গানের জন্ম দেয়, নদী কবিতার জন্ম দেয়। আনন্দ-বিরহের-ভালোবাসার সাক্ষী নদী। নদীর তীরেই গড়ে ওঠে যান্ত্রিক জীবন, শিল্প কারখানা, এসব শিল্প কারখানা আবার আমাদের অর্থের জোগান দেয়। বলা চলে, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচে। কিন্তু কি করছি আমরা! কিভাবে শোধ করছি নদীর ঋণ? আমরা কাজ করছি বহমান নদী প্রকৃ্তির বিরুদ্ধে।

আমরা হয়তো কোন এক ইছামতির ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাঁধ দিয়ে, স্লুইস গেট বসিয়ে তার আপন গতি থামিয়ে দিতে চাইছি, তথাকথিত সাময়িক উন্নয়নের নাম দিয়ে। এসব বাঁধ,স্লুইসগেট নির্মাণে আমাদের সহয়তার (সহায়তা!)না মে ঋণ দিচ্ছে বিভিন্ন উন্নত দেশ। দিনের পর দিন আমরা শুধু ঋণের বোঝা টেনে চলেছি। যা দেশের জন্য যেমন অমঙ্গল বয়ে আনছে, এবং ধ্বংস করছে আমাদের দেশের সুন্দর প্রকৃ্তিকে।

এমন তো কখন হয়নি যে কোন বিদেশী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বাঁধ ভাঙ্গার জন্য আমাদের সহায়তা করেছে! আসলে সবই তাদের বাণিজ্যিক লাভের কৌশল মাত্র। উদাহরণ সেই বিল ডাকাতিয়া। শুনতে ডাকাতিয়া নদীর নামের মত সুন্দর শোনালেও বিল ডাকাতিয়ার ইতিহাস বলে অন্য কথা। খুলনা জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিলটি আশির দশকে স্থানীয় মানুষের জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়।

Advertisement

কেননা ষাটের দশকে উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে যে পোল্ডার তৈরি করা হয়েছিল তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি হতে থাকে জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকায় জলাবদ্ধ হয়ে পরে বিল সংলগ্ন হাজার হাজার মানুষ। পানির তলে হারিয়ে যায় ধান, কৃষি পণ্যসব সবকিছুই। এ অবস্থায় মানুষের জীবন-জীবিকা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বিল ডাকাতিয়া তখন ছিল এক বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম।

হিসেব তো সহজ! যখন আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াই প্রকৃতি ধীরে ধীরে তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যান্ত্রিকতা কি খুব বেশি দিন টিকতে পারে? না। না...ইচ্ছামতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করলেই বিপদ। এক ইচ্ছার মৃত্যুই কি আর এক ইচ্ছের মৃত্যু ডেকে আনে না?

আমাদের বুড়িগঙ্গা ,শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করে কত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কত মানুষের আর্থিক যোগান দিচ্ছে এই নদীরা কিন্তু আমরা কি দিচ্ছি? বিষ? শিল্প কারখানার বর্জ্য ছাড়া আর কিছু না, কিন্তু কেন? হয়ত অজ্ঞতা বা আমাদের অসচেতনতা। আমরা এতটুকু দৃষ্টি ফেরালেই নদীরা ফিরে পায় আপন ধারা।

তাই চাওয়া, কোন যান্ত্রিক নিয়ম নদীকে না বাঁধুক! নামের মতই সুন্দর বয়ে চলুক আমার আন্ধার মানিক, আমার ধানসিঁড়ি আমার ভৈরব,কর্ণফুলি,সন্ধ্যা। সুগন্ধি ছড়াক সুগন্ধ্যা। ভাল থাকুক আমার সুখের সেই নাম না জানা ছোট নদীটিও। তার চলাচল যেন টের পাই জীবনভর...কথা বলি তার সাথে।

Advertisement

এইচআর/আরআইপি