একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৬ অক্টোবর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
Advertisement
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার মন্ত্রিসভার আকারে বড় কোনো পরিবর্তন নাও আনা হতে পারে বলে সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় সব দলের প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী ২৬ অক্টোবর সব সিদ্ধান্ত হবে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল ও পার্লামেন্টারি কমিটির যৌথ সভা হবে। সিদ্ধান্তগুলো যৌথ সভাতেই নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে মন্ত্রিসভার সাইজ ঠিকই থাকছে। মন্ত্রিসভার আকার ছোট হলে নতুন করে দু’একজন যুক্ত হবেন, আর আকার বর্তমানের মতো থাকলেও দু’একজন যুক্ত হতে পারেন।’
Advertisement
দু’একজন কারা আসবেন -জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘এটা রুলিং পার্টি থেকেও আসতে পারে, প্রধান বিরোধী দল থেকেও আসতে পারে। সম্ভবত প্রধান বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) থেকে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সর্বশেষ যে ভাবনা (মন্ত্রিসভা ছোট না হওয়ার বিষয়ে) এটার যৌক্তিকতা আছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও নির্বাচনের সময়ে আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকে। গতবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল।’
‘নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভা রুটিং ওয়ার্ক করবে। একনেকের বৈঠক হবে না। নির্বাচনের সময় মন্ত্রী, এমপিদের দায়িত্ব-কর্তব্য সংকুচিত হয়ে যাবে। এমপি হিসেবে পাওয়ার প্রয়োগ করতে পারবেন না। সবার জন্য যে আচরণবিধি সেটা এমপি, মন্ত্রী সবাইকে মানতে হবে।’ -বলেন ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রী-এমপিরা কোনো সার্কিট হাউজ বা সরকারি বাড়িতে থাকতে পারবেন না জানিয়ে কাদের বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় আমার গাড়ির পতাকাও থাকবে না। তবে মন্ত্রী হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তাকে তো নিরাপত্তা দিতেই হবে, তার তো শক্র থাকতে পারবে। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে।’
Advertisement
মইনুলকে গ্রেফতার করাটা জরুরি ছিলসাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে লাইভ টকশোতে ‘চরিত্রহীন’ বলার ঘটনার মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে কোনো জোটের বিষয় নয়, এটা হলো ব্যক্তির অপরাধের বিষয়। তিনি যেভাবে একজন নারী সাংবাদিককে অ্যাবিউস করেছেন, কোনো ভদ্রলোকের পক্ষে এ ধরনের আচরণ করা কি সম্ভব? তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় গ্রেফতার করাটা জরুরি ছিল, সেখানে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। এ ধরনের অপরাধ পার পেয়ে যাওয়া... তাহলে অনেকেই এ ধরনের অপরাধ করতে পারে।’
‘তিনি (ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন) ঐক্য ফ্রন্টের নব্য নেতা সেটা বিবেচনা করা হয়নি’ বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের সুযোগ নেই‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ সংশোধনের বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিকদের দাবির বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এই সরকারের এই সময়ে এই ধরনের সংশোধনীর আর কোনো সুযোগ নেই। তবে আইনের প্রায়োগিক যে বাস্তবতা, যাতে এই আইনের অপপ্রয়োগ না হয় সেই বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখব। আমরা সিরিয়াসলি ব্যাপারটা দেখব। যাতে এখানে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন যথাযথভাবে হয়। সাংবাদিকদের জন্য এই আইন করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি কোনো অপরাধ না করেন তবে আপানার ভয় কিসের? অপপ্রয়োগ যদি হয়, একটা অপপ্রয়োগ আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। আমি জানিই না। আমি পত্রিকায় দেখলাম, আমার বিকৃত করা ছবি ফেসবুকে শেয়ার করার অপরাধে ঝিনাইগাতিতে এক মহিলার নামে মামলা হয়েছে, তাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এই খবর শুনে আমি অবাক, আমি তখন পুলিশের আইজিকে ফোন করলাম, শেরপুরের এসপিকে ফোন করলাম। তারা আমাকে কেন জানালো না, এই মামলাটি করার আগে। তারা বলছেন- আওয়ামী লীগের এক নেতা মামলা করেছেন। মামলা তো নিয়েছে পুলিশ, পুলিশ আমাকে কেন জানালো না?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি সিরিয়াসলি বলার পর পরবর্তীতে তার রিমান্ড বাতিল হয়েছে, মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। তাকে রিলিজ (ছেড়ে) দেয়া হয়েছে। আমি নিজেই ব্যাপারটি হ্যান্ডেল করেছি। আমার বিষয় আমি জানি না। মহিলা তো অপরাধ করেনি, সে নতুন ফেসবুকে ঢুকেছে, সে এটা শেয়ার করেছে। মশা মারতে কামান দাগাতে হবে, এটা আমি সমর্থন করি না।’
এটা ‘বিউটি অব ডেমোক্রেসি’নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনার মাহবুব তালুকদারের অন্যান্য কমিশনাদের সঙ্গে মতানৈক্যের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ভিন্ন মত পোষণ করলেই... আমি তো মনে করি এটা বিউটি অব ডেমোক্রেসি। নির্বাচন কমিশন তো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নয়, যে পাঁচজনকেই সম্মত হতে হবে। পাঁচজনের একজন একটা পয়েন্টে ডিফারেন্স অব অপিনিয়ন হতেই পারে। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো বিভক্তি আসবে না।’
সংশোধন হবে না সড়ক পরিবহন আইনসড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সোমবার ঘোষণা দিয়েছে -সড়ক পরিবহন আইনের কতগুলো ধারা যদি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিবর্তন করা না হয় তাহলে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর তারা কর্মবিরতি পালন করবেন। আইনটি সংশোধন করা হবে কিনা? -জানতে মন্ত্রী বলেন, ‘না, এই সরকারের আমলে এই আইন সংশোধনের প্রশ্নই উঠে না। আমাদের হাতে দিন আছে দুটি। দু’দিন পরই সংসদ অধিবেশন শেষ হবে। কাজেই এ সময়ে এটা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘তারা যেসব দাবি-দাওয়া করছেন...তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কিন্তু এই আইনটি করা হয়েছিল। তাদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যদি কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তবে পরবর্তী সরকার আসলে সেটা দেখবে। সরকারে আমরাও আসতে পারি, অন্য কেউ আসতে পারে।’
‘এই মুহূর্তে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা কোনো ধরনের কিছু করতে যাব না। সংশোধনের সময়ও নেই, সুযোগও নেই। তাদের দাবি তারা করতে পারে। সেটা করুক।’ -যোগ করে তিনি।
নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। আগামী ২৬ অক্টোবরের মিটিংয়ে এটি নিয়ে আলোচনা হবে।’
কী থাকছে এতে? -জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী থাকছে এটা দল প্রকাশ করার আগে আমি এ বিষয়টি নিয়ে...এটা দলের কালেক্টিভ একটা প্রয়াশ, কাজেই বিষয়টি আমার মুখ দিয়ে আসা উচিত নয়।’
আরএমএম/আরএস/জেআইএম