রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি পরীক্ষার খাতা ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অপরাধের ব্যাখ্যা চেয়ে দু-দফায় নির্দেশনা দিলেও পাত্তা দিচ্ছেন না অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। এ কারণে সোমবার (২২ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে তৃতীয় দফায় অধ্যক্ষের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা পাঠাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বিদ্যালয়) আনোয়ারুল হকের স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়েছে, ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল, বনশ্রী ও মুগদা শাখায় ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার খাতায় ঘষামাজা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে দুই দফায় অনুরোধ করা হলেও এখনও তা পাঠানো হয়নি। এ কারণে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তির উত্তরপত্রে ঘষামাজা এবং রাবার দিয়ে মুছে ভুল উত্তর শুধরে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে তদন্তে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে জমা হয় গত ৮ আগস্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘষামাজা ও রাবার দিয়ে মুছে সঠিক উত্তর লিখে পাস করানোর অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগমের বিরুদ্ধে। এ কাজে তাকে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে সহকারী প্রধান শিক্ষক আ. ছালাম খান, তার ভাই প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, হিসাব সহকারী দীপা এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. কবির হোসেন ও আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে রাবার দিয়ে মুছে সঠিক উত্তর লেখার সঙ্গে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা অনুসন্ধানে স্পষ্ট করা হয়নি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘষামাজা সংক্রান্ত আনীত অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা না পেয়ে সোমবার তৃতীয় দফায় তিন কার্যদিবসের মধ্যে ফের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উত্তরপত্রে ঘষামাজার বিষয়টি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন শ্যামলী শিমু নামে এক অভিভাবক। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর অধিকতর তদন্তের দাবি করেন শ্যামলী শিমু। উত্তরপত্রে কারা ঘষামাজা করেছে, তা খুঁজে বের করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তিনি। মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক মান্নান এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে ব্যাখ্যা দিতে গত ১৫ দিন আগে আমরা চিঠি দেই। সেখানে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। ‘এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আবারও তাগাদা দেয়া হয়েছে। সেটি বিবেচনা করে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা পাঠানো হবে।’ পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের তত্ত্বাবধানে আরও একটি কমিটি আইডিয়ালের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, ‘ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, সুস্পষ্টভাবে তা দেয়া হবে। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যক্ষ।
Advertisement
মাউশি বরাবর পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা
এমএইচএম/এমএআর/বিএ
Advertisement