সিনেমা হলের সামনে অনেক মানুষের ভিড়। একটা গাড়িকে ঘিরে ধরে চলছে দর্শকের কোলাহল। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ‘অভিসার’ সিনেমা হলের সামনে এমনটাই দেখা গেল। কাছে যেতেই বোঝা গেল গাড়ি ঘিরে রাখার রহস্য।
Advertisement
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন নায়ক বাপ্পী চৌধুরী। নায়ককে দেখতেই মানুষের এতো আগ্রহ। কিছুক্ষণ পরে আরও একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। এই গাড়ি থেকে নামলেন নায়িকা অধরা খান, গেল শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ‘নায়ক’ সিনেমার পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান ও সিনেমাটির প্রযোজক।
দর্শকদের সঙ্গে নিয়েই সিনেমা হলে প্রবেশ করলেন বাপ্পী-অধরা। নায়ক, নায়িকাকে সঙ্গে পেয়ে পুরো সিনেমা হলের দর্শকরা উত্তেজিত। পুরো হলজুড়ে হইচই। সিনেমা শুরু হতে আবার পিনপতন নিরবতা। পর্দায় নায়ক আসতেই হাত তালিতে ভরে যায় সিনেমা হল। পর্দায় নায়িকার আগমনের সময়ই প্রচুর হাত তালিতে মুখর চারিদিক। ধীরে ধীরে একটা ভালোবাসার গল্পের ভেতর ঢুকে পড়েন দর্শক।
অভি ও অন্তু নামের দুই ধনীর দুলাল-দুলালীর গল্প কখনো তাদের হাসায়, কখনো চোখে পানি এনে দেয়। ছোট্ট একটা দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে অন্তুর দেখা পেলেন অভি। বেশ কিছুদিন ধরে অন্তুর জন্য অপেক্ষার পর তাকে কাছে পাওয়া। সেই পাওয়াকে নিজের করে নিতে নায়কোচিত লড়াই, চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প এই ছবিতে।
Advertisement
জনপ্রিয় ধারার সিনেমা হিসেবে ‘নায়ক’র গল্পটি বেশ ভালই। সিনেমা দেখতে শুরু করলে শেষ না করে ওঠার উপায় নেই। একটা পর একটা বাঁক এসে যায়। এরপরে কী ঘটতে যাচ্ছে দেখার অপেক্ষায় থাকবেন দর্শক।
নায়ক বাপ্পীর বিপরীতে অধরা খানের অভিষেক হলো এই সিনেমার মাধ্যমে। বাপ্পী অভিনেতা হিসেবে পরিক্ষিত, আর প্রথমবারের মতো পর্দায় হাজির হলেন অধরা।
বাপ্পী তার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই সিনেমায়। অন্যদিকে নতুন হিসেবে অধরা খানের অভিনয়ও উৎরে গেছে। নতুন হিসেবে ভালো অভিনয় করেছেন অধরা। প্রথম পরীক্ষায় পাশ নম্বর পেতেই পারেন এই নবাগতা। নিজের অভিনয়ের প্রতি আরও যত্নবান হলে, ক্যারিয়ারের প্রতি মনযোগী হলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন সহজেই।
সিনেমার এই ক্রান্তিলগ্নে একজন নতুন নায়িকা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন ছবির দুই পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান। তাদের অভিবাদন।
Advertisement
সিনেমার গল্পটি নায়ক বাপ্পীকে ঘিরে। সিনেমায় দেখা যায়, বাবার কড়া শাসনে ছেলেটির মন বারবার ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। মা আর ফুপুর আদরে কিছুটা ব্যাথা কমেছে ঠিকই, কিন্তু মনে মনে অভিমানের পাহাড় জমে গেছে বুকে। শিক্ষা জীবনের প্রতিটা ক্লাসে প্রথম হওয়া ছেলেটা নিজেকে হেরে যাওয়া একজন মানুষ ভাবে। শাসনের জালে বন্দি হয়ে জীবনের কোনো ইচ্ছেই পূর্ণ হয় না তার। শেষ ইচ্ছেটা পূর্ণ হয় যখন তখন হল ভর্তি দর্শকের চোখে পানি।
সিনেমাটিতে অধরার বোনোর চরিত্রে মৌসুমীর অভিনয় ছিল অনবদ্য। বাপ্পীর মায়ের চরিত্রে রেবেকাও ভালো অভিনয় করেছেন। আর বাবার চরিত্রে সুব্রত’র অভিনয় বেশ ভালো। এছাড়া অমিত হাসান, আমান রেজা, নুসরাত জাহান পাপিয়াসহ সিনেমার প্রত্যেকেই তাদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
সিনেমাটির গানগুলোও ছিল বেশ শ্রুতি মধুর। গল্পের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে গানগুলো। চিত্রায়নও হয়েছে মানানসই।
তবে চলচ্চিত্রটিতে কিছু কিছু ডায়লগ অস্পষ্ট ছিল। অতিমাত্রায় ইংরেজি সংলাপের বিরক্তিও হয়তো দর্শক বোধ করবেন। এতো ইংরেজি ডায়লগ না থাকলেই ভালো হতো, মানানসই লাগতো। চিত্রনাট্যকারকে শতভাগ ধন্যবাদ দেয়া যেত।
টেকনোলজি নিয়ে অনেক কথা হয় আজকালের সিনেমায়। সেই জায়গায় নায়ক চেষ্টা করেছে মাত্র। গানগুলোতে আলাদা করে টেকনোলজির উন্নতির ছাপ থাকলেও পুরো সিনেমায় লাইট, মেকাপের দুর্বলতা দর্শকের চোখে পড়তে পারে।
তবুও বলা যায় চলতি বছরের ভালো একটি ছবি ‘নায়ক’। নির্মতা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদ্বয় চেষ্টা করেছেন দর্শককে সুবিন্যস্ত একটি চলচ্চিত্র দিয়ে বিনোদিত করতে। দর্শক গল্পের প্রয়োজনে হেসেছেন, গল্পের স্রোতেই আনমনে চোখ ভাসিয়েছেন অশ্রুতে। আর বেশ সাবলীলভাবেই দর্শক কাঁদানোর মতো কঠিন কাজটি করতে পেরেছেন বাপ্পী।
৭০টিরও বেশি হলে মুক্তির পর থেকে সারাদেশে ভালো সাড়া মিলেছে ‘নায়ক’ ছবির জন্য। সাফল্যের এই রথ চলমান থাকুক। ব্যবসা সফল ছবি হোক নায়ক। জয় হোক ঢাকার চলচ্চিত্রের।
এমএবি/এলএ/পিআর