দেশজুড়ে

সবহারাদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সেনাবাহিনী

মেঘনাপাড়ের জনপদ লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় চার দশক ধরে ভাঙনের খেলা চলছে। এর মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। ছিন্ন হয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।এ বিষয়ে বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের বাক্স ভরলেও পরে আর খবর রাখেনি তাদের। সবশেষ লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুনেরও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নদী ভাঙন প্রতিরোধ করার।এনিয়ে সর্বস্তরের জনতা একাধিকবার মানববন্ধন, সভা-সেমিনার, সড়ক অবরোধ এবং উপজেলা পরিষদ ভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সরেজমিনে দেখে গেছেন ভাঙনের নিষ্ঠুরতা।বহু আন্দোলন-সংগ্রামের পর এবার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মানুষের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে সেনাবাহিনী। ভাঙন রোধে রামগতিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে রামগতি উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক সড়ক, সদরের ঐতিহ্যবাহী আলেকজান্ডার বাজার, বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ বেশ কিছু স্থাপনা। এতে অবহেলিত এ জনপদে ফিরে আসছে স্বস্তি। একাধিকবার বাড়ি-ঘর ও পূর্ব-পুরুষের স্মৃতি হারানো মানুষগুলো নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।জানা গেছে, রামগতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করছে। অস্বাভাবিক জোয়ার, তীব্র ঢেউ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষায় প্রাণান্তকর চেষ্টা তাদের। দিন-রাত ৫০-৬০ জন সৈনিক উত্তাল মেঘনার সঙ্গে যেন যুদ্ধ করে চলছে। এ যুদ্ধ মানুষের ভিটেমাটি রক্ষার যুদ্ধ।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগতিতে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়। প্রথমে আলেকজান্ডার বাজার সংলগ্ন এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মানের কথা ছিল। পরে জনগণের যানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সেনাবাহিনী। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে মাত্র পাঁচ মাসে করা হয় এক বছরের কাজ। ছয় লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়। এছাড়া ব্লক ফেলা হয়েছে।স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেনাবাহিনী নদী ভাঙন রোধে কাজ না করলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, রামগতি উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা ও আলেকজান্ডার বাজারসহ অসংখ্য স্থাপনা বিলীন হতো।রামগতি পৌরসভার অালেকজান্ডার এলাকার রাসেল পাটোয়ারী জানান, ভাঙন থেকে মাত্র দেড়শ’ গজ দূরে ছিল তার বসতভিটা। বাঁধ দেয়ায় এবার তাদের শেষ সম্বল রক্ষা পেয়েছে। সব কিছু হারানো মানুষ এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।আলেকজান্ডার বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাহার খন্দকার জানান, ভাঙন রোধে কাজ না করলে ঐতিহ্যবাহী আলেকজান্ডার বাজার থাকতো স্মৃতি হয়ে। ব্যবসায়ীরা এখন স্বস্তিতে রয়েছে।রামগতি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, সেনাবাহিনীর নিরলস পরিশ্রমে আমরা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি। সরকার বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করলে এ দুই উপজেলার মানুষ রক্ষা পাবে।এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানভীর হোসেন পিএসসি বলেন, সরকারের নির্দেশনা সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসডব্লিউওর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ওহাবের তত্ত্বাবধানে এ ইউনিটের সৈনিকরা গত পাঁচ মাসে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে।জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙন রোধে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থে সাড়ে পাঁচ কিমি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের বরাদ্দের পেতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বরাদ্দ এলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিয়মানুযাযী কাজ করা হবে।প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকার অনুমোদন করেছে একনেক। প্রথম পর্যায়ে ১৯৮ কোটি টাকায় রামগতি ও কমলনগরে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। আরো সাড়ে ২৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে।কাজল কায়েস/বিএ

Advertisement