বিশেষ প্রতিবেদন

তিন বছর ধরে লেগুনা চালাচ্ছে ৮ বছরের বাদশা

ফার্মগেটের ব্যস্ত সড়কে দেখে বোঝার উপায় নেই লেগুনা চলাচল করছে। অথচ মূল সড়কের পাশে ইন্দিরা রোড পুরোটাই লেগুনার দখলে। সিরিয়াল মেনেই ফার্মগেট থেকে মিরপুর-২ পর্যন্ত চলাচল করছে রাজধানীর মূল সড়কে নিষিদ্ধ এ লেগুনা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, লেগুনার (ঢাকা মেট্রো ছ-১১-২৫৬২) স্টিয়ারিং হাতে চালকের আসনে বসে আছে এক শিশু। তার নাম বাদশা, বয়স ৮ বছর। বাদশার যখন থাকার কথা বইখাতা নিয়ে স্কুলে; তখন জীবিকার টানে দিনে মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে লেগুনা চালাতে হচ্ছে। বয়স ৮ বছর হলেও বাদশা লেগুনা চালিয়ে আসছে ৩ বছর ধরে।

ঘটনাটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য; যা বাদশার মুখেই স্পষ্ট হয়। বাদশা জাগো নিউজকে বলে, ‘স্ট্যান্ডে সিরিয়াল লাগলে লেগুনা চালাতে দেয় মালিক। রাইতেও সিরিয়াল লাগলে চালাতে দেয়। ফার্মগেট থাইক্কা চালাইয়া মিরপুর যাই। মিরপুর-২ থাইক্কা আবার আসি গ্যাস পাম্পে। তবে রাতে যাত্রীরা বেশি থাকে। তখন চালাই না। এভাবেই চালাইতে চালাইতে হাত পাকা কইরা ফালাইছি। এখন পুরোপুরি চালাতে পারি।’

কতদিন ধরে লেগুনা চালাচ্ছ জানতে চাইলে বাদশা বলে, ‘তিন বছর ধরে লেগুনা চালাই। তবে একবছর ধইরা নিয়মিত চালাইতেছি।’

Advertisement

পড়াশুনার খবর জানতে চায়লেই চোখ ছলছল করে ওঠে বাদশার। সে বলে, ‘পেটই তো চলে না আবার স্কুল! আগারগাঁও বস্তিতে থাকি। জন্মের পর থেকে বাপরে দেখি নাই, মা-ই সব। বাসা-বাড়িতে কাজ করে। লেগুনা চালাই ১৫০ টাকা করে পাই। এ টাকায় মাও খুশি।’

বাদশা যে লেগুনা চালায় তার মালিক ইয়াছিন আলী। তার ৪টি লেগুনা ফার্মগেট থেকে মিরপুর-২ রুটে চলাচল করছে। শুধু ফার্মগেট থেকে মিরপুর-২ রুটে চলাচল করে অর্ধশত লেগুনা। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার পরও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের যোগসাজশেই চলছে এ লেগুনা।

কাজল নামে আরেক চালকের সঙ্গে কথা হয়। কাজল জানান, ফার্মগেট থেকে খামার বাড়ি গোলচত্বর হয়ে, শেরে বাংলা নগর হয়ে ৬০ ফিট দিয়ে মিরপুর-২ মোড় পর্যন্ত চলাচল করছে লেগুনা। বেশ কয়েকটি রুটে লেগুনা বন্ধ থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখানে বাধা পাইনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরের মূল সড়ক দিয়ে লেগুনা চলাচল করতে দেয়া হবে না- মর্মে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের নির্দেশনার প্রতিফলন এখনও ঘটেনি। কয়েকটি রুটে লেগুনা বন্ধ হলেও পূর্বের ন্যায় পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লেগুনা।

Advertisement

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, গণপরিবহন কিংবা পণ্যবাহী যানে কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই লাইসেন্স থাকতে হবে, ১৮ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার্য স্থানে মোটরযান চালাতে পারবেন না, এক ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক কেউ তো ড্রাইভিং করতেই পারবে না। আর গণপরিবহনে তো সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। আইনের শিথিলতার সুযোগ নিয়েই মালিক শ্রমিকপক্ষ এ কাজ করছে। আর আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার সুযোগ নিয়েই অপ্রাপ্ত বয়স্করা চালকের আসনে বসছে। এরমধ্য অপরাপর লোকজনও উৎসাহিত হচ্ছে। এতে পরিবহন খাতের নিরাপত্তা যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি মানুষের জানমালেরও ঝুঁকি বাড়ছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) লিটন কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চালক হওয়ারই সুযোগ নেই। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি চালাতে দেখা গেলে ট্রাফিক বিভাগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালককে শ্রমিক কিংবা মালিক সংগঠনের জিম্মায় দিয়ে ওই পরিবহনের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর ফার্মগেট থেকে মিরপুর-২ পর্যন্ত লেগুনা চলাচল বন্ধ। তবুও চলাচল করে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জেইউ/এনডিএস/জেআইএম