আন্তর্জাতিক

তাদের বাবাদের বিরুদ্ধেই যৌন হয়রানির অভিযোগ

ভারতে বয়ে যাচ্ছে ‘মি টু’ঝড়। একের পর এক অভিযোগের তীর ছোড়া হচ্ছে দামিদামি ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে নারী অধিকার আন্দোলনে সরব কারও কারও বাবার নাম। না চাইলেও সেই বিতর্কের ঝড়ে পড়ে যাচ্ছেন তাদের মেয়েরাও।

Advertisement

নন্দিতা দাস ও মল্লিকা দুয়া তেমনই দুজন। একজন ভারতের নামী অভিনেত্রী ও পরিচালক, অন্যজন দেশের সেরা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের একজন। অভিনয়ও করেন সিনেমাতে।

দুজনের আর একটা মিল, নারীদের অধিকার আন্দোলনের লড়াইয়ে তারা আগাগোড়াই সরব, পরিচিত মুখ। সাহসী ও বলিষ্ঠ মতামতের জন্য দুজনকেই মানুষ স্পষ্টভাষী বলে চেনে। কিন্তু এ মুহুর্তে তারা দুজনেই কিছুটা অস্বস্তিতে। কারণ ভারতে মি টু আন্দোলনের সুনামিতে ভেসে এসেছে তাদের দুজনেরই বাবার নাম। তারা যথাক্রমে শিল্পী যতীন দাস ও সাংবাদিক বিনোদ দুয়া।

‘পদ্মভূষণ’ খেতাবে ভূষিত যতীন দাস ভারতের জীবিত শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বললেও সম্ভবত ভুল হবে না। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর, বহু স্মরণীয় শিল্পকর্মের স্রষ্টা।

Advertisement

আর বিনোদ দুয়া গত চার দশকে ভারতের হিন্দি সাংবাদিকতার জগতে একজন দিকপাল, বিখ্যাত টিভি অ্যাঙ্কর। এ মুহুর্তে তিনি 'জনগণ মন কি বাত' বলে একটি সাপ্তাহিক ভিডিও বার্তা পরিবেশন করে থাকেন, সেটিও তুমুল জনপ্রিয়।

গত ১৬ অক্টোবর নিশা বোরা নামে একজন নারী প্রথম টুইটারে যতীন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, ১৪ বছর আগে তিনি ওই শিল্পীর হাতে যৌন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন।

যতীন দাসকে ‘মাই মলেস্টর’ বলে অভিহিত করে নিশা বোরা বিশদে বর্ণনা দিয়েছেন, কীভাবে দিল্লিতে নিজের স্টুডিওতে ডেকে পাঠিয়ে শিল্পী তাকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন।

তার ওই বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পর গারুশা কাটোচ, মালবিকা কুন্ডু ও অনুশ্রী মজুমদারের মতো আরও অনেক নারী প্রকাশ্যে এগিয়ে এসে যতীন দাসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, জানিয়েছেন শিল্পী কীভাবে তাদেরও বিভিন্ন সময়ে যৌন নিগ্রহ করেছিলেন।

Advertisement

এদিকে পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে ‘স্টকিং’ ও যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ এনেছেন নিষ্ঠা জৈন নামে আর এক চিত্রনির্মাতা ও সাংবাদিক।

১৯৮৯ সালে চাকরির ইন্টারভিউতে ডেকে ও পরে নিজের গাড়িতে বসিয়ে কীভাবে বিনোদ দুয়া তাকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন, প্রায় তিরিশ বছর পর সে ঘটনারও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন নিষ্ঠা।

এরই মধ্যে যতীন দাস ও বিনোদ দুয়া দুজনেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।

কিন্তু এ সব অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাদের মেয়েরা, যথাক্রমে নন্দিতা দাস ও মল্লিকা দুয়া, কী ধরনের অবস্থান নেন সে দিকে অনেকেরই নজর ছিল।

বিশেষত নন্দিতা দাসের ওপর, কারণ বলিউডের যে ১১ জন নারী চিত্রনির্মাতা একসঙ্গে মিলে অঙ্গীকার করেছেন ‘মি টু’-তে অভিযুক্ত কারও সঙ্গে কোনো কাজ করবেন না নন্দিতা তাদেরও একজন।

নন্দিতা দাস অবশ্য বেশিক্ষণ চুপ থাকেননি। নিশা বোরা টুইটারে তার অভিযোগ প্রকাশ করার পরদিনই নন্দিতা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘মি টু আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে আমি আবারও বলতে চাই, যদিও আমার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বিচলিত করার মতো অভিযোগ উঠেছে ও সেগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন, আমি এ আন্দোলনের পক্ষে সরব থাকব।’

‘প্রথম থেকেই আমি বলে আসছি এটা এমন একটা সময় যখন আমাদের শোনাটা খুব প্রয়োজন, যাতে নারীরা মুখ খুলতে ভরসা পায়। পাশাপাশি অভিযোগগুলো নিয়ে নিশ্চিত হওয়াটাও কিন্তু জরুরি, যাতে এ আন্দোলনে বেনোজল না-ঢুকে যায়!’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি অভিভূত যে চেনা-অচেনা বহু লোক বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আমার সততার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সত্যিটা একদিন সামনে আসবেই - আর এ মুহুর্তে আমার এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

কমেডিয়ান মল্লিকা দুয়াও নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, তার বাবার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে ‘তা সত্যি হলে’ কিছুতেই মেনে নেওযা যায় না।

নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, ‘নিষ্ঠা জৈনের প্রতি : আপনি যা বর্ণনা করেছেন, আমার বাবা যদি সত্যিই সেই অপরাধে দোষী হন, তাহলে সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য, যন্ত্রণাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।’

‘মি টু আন্দোলনের প্রতি আমার সহমর্মিতা অটুট থাকবে, এ কণ্ঠস্বরগুলোকেও আমি সমর্থন করে যাব। কিন্তু অভিযোগ করতে গিয়ে যেভাবে আপনি আমার নামকেও টেনে এনেছেন সেটা অত্যন্ত কুরুচিকর’ লিখেন মল্লিকা দুয়া।

মল্লিকা দুয়া আরও লিখেন, ‘বাকি সবার প্রতি : এ লড়াইটা কিন্তু আমার নয়। এটা আমার কোনো দায় নয়, লজ্জা নয় - বা আমার কোনো বোঝাও নয়। এটা পুরোপুরি আমার বাবারই লড়াই। আমি তাকে লড়তে দেব, এবং অবশ্যই তার পাশে থাকব।’

মল্লিকা দুয়া যে নিজের অভিযুক্ত বাবার পাশেই আছেন, সম্ভবত সেটা বোঝাতেই কিছুক্ষণ পর ইনস্টাগ্রামে আর একটি পোস্ট করেন তিনি, যাতে দেখা যাচ্ছে স্কুল বা কলেজজীবনে জেতা কোনো ট্রফি তার হাতে, আর গর্বিত বাবা বিনোদ দুয়া সস্নেহে তার কাঁধে হাত রেখে আছেন।

মল্লিকা ছবিটির নিচে ক্যাপশন দেন, ‘হিরোদের রাতারাতি গড়াও যায় না, আবার ভাঙাও যায় না। # পাপাজি।’

 এনডিএস/জেআইএম