অর্থনীতি

পৌনে ২ কোটি টাকা পরিশোধে মেঘনা ইনস্যুরেন্সের টালবাহানা

>>> আইডিআরএ নিদের্শনা মানছে না মেঘনা ইনস্যুরেন্স >>> দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ৮২ বছরের বৃদ্ধা

Advertisement

পাওনা আদায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ শেখ আব্দুল কাদের। মেঘনা জেনারেল ইনস্যুরেন্সে চাকরি করে প্রাপ্য বেতন পাননি। পাওনা আদায়ে হাইকোর্ট, বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ থেকেও নিয়েছেন নির্দেশনা। তাতেও কাজ হয়নি, টনক নড়েনি মেঘনা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির।

শেখ আব্দুল কাদের জীবনের ২৭ বছর কাটিয়েছেন ব্যাংকার হিসেবে। সেখান থেকে অবসর নিয়ে যোগ দেন বীমা পেশায়। কাজ করেছেন দেশের নামি-দামি বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে। কর্মময় জীবনের শেষে সময়ে আটকে গেছেন মেঘনা জেনারেল ইনস্যুরেন্সে।

বেতন-ভাতা ও বোনাস বাবদ কোম্পানির কাছে সুদসহ চারবছরে পাওনা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ টাকায়। তবে এ পাওনা তিনি আদায় করতে পারেননি।

Advertisement

গত ১১ মার্চ আইডিআরএর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, মেঘনা ইনস্যুরেন্স থেকে মূল বেতন, ভাতা ও বোনাসসহ তার পাওনা প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সুদসহ মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

তিনি জানান, ‘২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন মেঘনা ইনস্যুরেন্সকে। অথচ পাওনা বেতন-ভাতাদি পরিশোধ না করে তারা নানা অজুহাতে বিলম্ব করতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরি থেকে অব্যাহতির চিঠি দেয়। এরপর মেঘনা ইনস্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের চিঠির লিখিত উত্তর এবং আমার সমুদয় পাওনা পরিশোধের দাবি জানাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেঘনা ইনস্যুরেন্স থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি।’

তিনি আরও জানান, ‘বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেছি। এর প্রেক্ষিতে আইডিআরএ বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সদস্য (আইন) বোরহান উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেয়। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে রিপোর্ট দেয়ার পর আইডিআরএ গত ১৩ সেপ্টেম্বর শেখ আব্দুল কাদেরের পাওনাদি নির্ধারণপূর্বক পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়।’

এরপর মেঘনা জেনারেল ইনস্যুরেন্সের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শেখ আব্দুল কাদের তাদের কাছে কোনো টাকাই পান না। তাদের দাবি আইডিআরএ যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটি অনুসরণ করেই কোম্পানি সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কোম্পানির এমন বক্তব্য মানতে নারাজ আব্দুল কাদের।

Advertisement

এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি এম. ফারুকের হাইকোর্ট বেঞ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে তার বেতন পরিশোধ করে আদালতকে জানানোর জন্য আইডিআর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপর আইডিআরএ মেঘনা ইনস্যুরেন্সকে কয়েক দফা পাওনা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আব্দুল কাদের বলেন, পাওনা আদায়ে কয়েকবার মেঘনা ইনস্যুরেন্সের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমার সব কাগজপত্র তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে পাওনা পরিশোধের। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও মেঘনা ইনস্যুরেন্সকে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও তারা কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।

তিনি বলেন, কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রেক্ষিতেই আমি টাকা দাবি করছি। এখানে মনগড়া বা সাজানো কিছু নেই।

জানা গেছে, শেখ আব্দুল কাদের গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স থেকে ২০১২ সালে মেঘনা জেনারেল ইনস্যুরেন্সে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগ দেন। তার মোট বেতন ধরা হয় ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। যোগদানের প্রথম মাস থেকেই তিনি কোম্পানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে আসছেন। তার নেট প্রিমিয়ামের মাসিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ১০ হাজার। যোগদানের প্রথম মাসেই তিনি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৩ টাকা প্রিমিয়াম জমা করেন। কিন্তু বীমার নিয়মে পাওনা থাকলেও প্রায় প্রতিমাসে এভাবে তার অর্জিত অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের বর্ধিত আয় তাকে দেয়া হয়নি। মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে তিন বছর ১১ মাস চাকরিকালে ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম জমার লক্ষ্যমাত্রার স্থলে, তিনি জমা করেন ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকা। এরমধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি ও ভ্যাট বাদ দিয়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩ টাকার নেট প্রিমিয়াম জমা হয়। এ থেকে তার পাওনা বেতন দাঁড়ায় এক কোটি ৯১ লাখ পাঁচ হাজার ৭৩৯ টাকা। এরমধ্যে তাকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৬৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। বাকি এক কোটি ২৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৩৯ টাকা বেতন-বোনাস তাকে দেয়া হয়নি। লভ্যাংশসহ বর্তমানে তা প্রায় এক কোটি ৭২ লাখ ১৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে মেঘনা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম সারোয়ার জাহান জামিল জানান, আব্দুল কাদের হাইকোর্টে রিট করেছেন। তবে তিনি আমাদের কাছে কোনো টাকা পান না। আমরা সব ধরনের হিসাব করেছি। কাগজে কলমে তিনি যা পান সেটি দেয়া হয়েছে, বরং এখন তিনি যা দাবি করছেন সেটি তার মনগড়া হিসাব।

তিনি বলেন, আইডিআরএ’র নির্দেশ না মানার কিছু নেই, বরং তারা যখন আমাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন তখন আমরা সব হিসাব সেখানে উপস্থাপন করেছি। তিনিই সেখানে যথাযথ তথ্য দিতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ শেখ আব্দুল কাদেরের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমাদের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি আইডিআরএকে পাঠাবো। তারা সেটি হাইকোর্টে পাঠাবেন। হাইকোর্ট সেটি যাচাই করে কি সিদ্ধান্ত দেন সেটিই দেখার বিষয়।

এমএ/এমএমজেড/এএইচ