বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন হাসপাতাল ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী বুধবার রাজধানীর চাঁনখারপুলে স্থাপিত ১৮ তলাবিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Advertisement
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসার লক্ষ্যে স্থাপিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এ প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসায় এমন একটি বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট স্থাপিত হবে এমন স্বপ্ন সারাজীবন দেখেছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেখে তিনি ভীষণ খুশি।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহায়তার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, পোড়া রোগীদের দুঃখ-কষ্ট দেখে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট স্থাপনের নির্দেশনা দেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ রোববার বিকেলে বলেন, বিশ্বের কোথাও এত বড় বার্ন ইনস্টিটিউট নেই। এ ইনস্টিটিউটে একাধারে পোড়া রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা ও অধ্যয়নের আদর্শ কেন্দ্র বলে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পাবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে ৫২২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৯১২ কোটিতে দাঁড়ায়।
২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ ইনস্টিটিউটটি নির্মাণের অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁনখারপুলে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৭ এপ্রিল বাংলদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
জানা গেছে, বহুতল বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটটির মাটির নিচে তিনতলা বেজমেন্ট। সেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হচ্ছে। ইনস্টিটিউটটিতে ৫০০টি শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থাকবে।
Advertisement
আকাশছোঁয়া এ ভবনটি তিনটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে থাকবে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আর অন্য ব্লকটিতে করা হবে অ্যাকাডেমিক ভবন। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা হচ্ছে।
রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। এখনও পুরো কাজ শেষ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তিনদিন আগে থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোর থেকে জরুরি বিভাগের আশপাশের রাস্তার ফুটপাতের ভাসমান দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইনস্টিটিউটের চৌহদ্দিতে টহল বৃদ্ধি করেছেন।
শূন্য থেকে আকাশছোঁয়া ভবনবার্ন বিশেষজ্ঞরা জানান, আশির দশকের প্রথম ভাগেও দগ্ধ রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেলে কোনো ইউনিট ছিল না। পোড়া রোগীদের জায়গা হতো হাসপাতালের বারান্দায়। ১৯৮৬ সালে ছয়টি শয্যা নিয়ে দেশে প্রথম বার্ন ইউনিট চালু হয় ঢাকা মেডিকেলে। এটি ৫০ শয্যা করা হয় ১৯৯৬ সালে। আরও ৫০ শয্যা বাড়তে সময় লাগে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০১৩ সালে সরকার ইউনিটটিকে ইনস্টিটিউট করে ৩০০ শয্যা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ইউনিটের জনবল ১০০ শয্যার, ওষুধপথ্যের জোগানও ১০০ জনের হিসাবে। বাকিটুকু চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদান নিয়ে।
একপর্যায়ে সরকারের নির্দেশনায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু করা হয়।
জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা, আঙুল জোড়া লাগানো, পায়ের ত্রুটি, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা, ট্রমা, হাত-পা সার্জারি রোগীদের একটা বড় অংশ ঢামেক বার্ন ইউনিটে আসে। দেশে প্লাস্টিক সার্জন দরকার ন্যূনতম ৪০০ জনের মতো। কিন্তু বাংলাদেশে এখন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছেন ৬৫ জন।
৫০০ শয্যার ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধনের খবরে পোড়া রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মনে আশা জেগেছে। তবে ইনস্টিটিউটটিতে তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান বলে জানিয়েছেন।
এমইউ/বিএ/পিআর