জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৬ অক্টোবর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়।
Advertisement
বর্তমানে তিনি কেবিন ব্লকের ৬১২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে।
কারাগার থেকে হাসপাতালে ভর্তির পর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। হাসপাতালে এখন কেমন আছেন বেগম খালেদা জিয়া? রাজধানীসহ সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের অনেকের মনেই তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য জাগো নিউজকে জানান, সাদামাটাভাবে বললে কারাবন্দি পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া মানসিকভাবে তুলনামূলক ভালো আছেন। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি ভালো (সুস্থ) নেই। আর্থাইটিসের সমস্যা তাকে ভোগাচ্ছে।
Advertisement
তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করায় ব্যথা আগের চেয়ে একটু কম। আর্থাইটিসের কারণে হাত ও কাঁধ অবশ (ফ্রোজেন শোল্ডার) হওয়ায় ফিজিওথেরাপি চলছে তার। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শে ফিজিওথেরাপির পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের ওষুধও খাচ্ছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। সঠিকভাবে রোগের কারণ চিহ্নিত করতে বিএসএমএমইউয়ের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানেও নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
জানা গেছে, বিশেষ একটি রোগ নির্ণয়ের জন্য চারদিন আগে মহাখালী আন্তজার্তিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) নমুনা পাঠানো হয়েছে। এ পরীক্ষার ফল হাতে পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগে।
বর্তমানে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। আর্থাইটিসের ব্যথায় কষ্ট পেলেও জেলখানার চেয়ে হাসপাতালের কেবিনে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
Advertisement
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন থাকায় কেবিন ব্লকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। বিশেষ করে ছয়তলার কেবিনে যে রোগীরা ভর্তি আছেন তাদের অ্যাটেনডেন্টদের আসা-যাওয়ার সময় পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই ওই ব্লকে যেতে দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়ার পরও তাকে ওই ব্লকে প্রবেশ করার সময় আটকে দেয়া হয়েছে। আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হয় বলেও জানান ওই চিকিৎসক।
বেগম খালেদা জিয়ার সার্বিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ড প্রধান বিএসএমএমইউয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, তাদের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেয়ায় শরীরে ব্যথা একটু কমেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে। কিছু রিপোর্ট পাওয়া গেছে, কিছু দু-তিনদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। সবগুলো রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা শুরু হবে।
এমইউ/এনএফ/পিআর