তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে রাজতন্ত্র-বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি। সেইসঙ্গে খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সৌদি আরব শুক্রবার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ আখ্যায়িত করে সঠিক তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে বার্লিন।
Advertisement
শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা কঠোরতম ভাষায় এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। রিয়াদ এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য দিয়েছে যা পর্যাপ্ত নয়।’
মার্কেল ও মাস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে খাশোগির আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চলমান তদন্ত রিয়াদ ‘ধামাচাপা’ দেয়ার চেষ্টা করছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গভীর উদ্বেগ করেছে।
Advertisement
লন্ডন ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকারুক্তি দেয়ার পর এ বিষয়ে রিয়াদের নিরপেক্ষ তদন্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
অ্যামনেস্টির সিনিয়র উপদেষ্টা রুইয়ো রাগেহ বলেছেন, ‘খাসোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা চলছে বা যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের মাধ্যমেই তদন্তের যে প্রক্রিয়া চলছে সে ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন।’
রাগেহ বলেন, খাশোগির ভাগ্যে কী ঘটেছে এবং তার পক্ষে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো একমত।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন জামাল খাশোগি। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নেয়ার জন্য সেখানে যান। তার প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য এসব কাগজপত্রের প্রয়োজন ছিল। হাতিসকে কনস্যুলেটের বাইরে রেখেই তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। হাতিস সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়ে থাকার পরেও খাশোগি আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকেই জামাল খাঁশোগির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
Advertisement
ওই ঘটনার পরপরই তুরস্কের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে, কনস্যুলেটের ভেতরেই জামাল খাশোগিকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তুরস্কের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল রিয়াদ।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সৌদির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের ফোনে আলাপ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সৌদির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে খাশোগি নিহতের বিষয়টি জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগির সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তির সংঘর্ষ ঘটে। এর ফলেই তার মৃত্যু হয়। খাশোগি হত্যার বিষয়ে তদন্ত এখনও চলছে এবং এই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়। একই সঙ্গে দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
তবে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশেই জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে।
এমবিআর/আরআইপি