‘এই নীল মনিহার কিংবা আবার এলো যে সন্ধ্যায় গানগুলো আমরা যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি বাচ্চু ভাইয়ের গানও আমরা বাঁচিয়ে রাখবো। তার গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে তার গান গাইবার চেষ্টা করবো।’ আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন শোকাহত গায়ক আসিফ আকবর।
Advertisement
এই গায়কের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর সম্পর্কটা ছিল অম্ল-মধুর। বেশ মজারও বলা যায়। আসিফকে ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন আইয়ুব বাচ্চু। এমন অনেক হয়েছে, কোনো কারণে আসিফের উপর রেগে আছেন, কিন্তু তার দুই ছেলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আর আইয়ুব বাচ্চু নিজের বাড়ি চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় প্রায়ই কুমিল্লা হয়ে যেতেন। আসিফ আকবরের মায়ের সাথে দেখা করতেন।
এইসব স্মৃতি বলতে গিয়ে আসিফ বলেন, ‘আমাদের গানের জন্য মন খারাপের দিন ১৮ অক্টোবর। আজ আমার ‘গহীনের গান’ ছবির শুটিং-এর কথা ছিল। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। একটা পর্যায়ে শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রেসারে সমস্যা হচ্ছিল। শুটিং বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে এসেছি। শুটিংয়ে সবাই শোকাহত ছিল।’
তিনি বললেন, ‘বাচ্চু ভাইকে নিয়ে কি বলবো? কি লিখবো? এতো স্মৃতি সারাজীবন বললেও শেষ হবে না। ক্ষমা করে দেবেন বাচ্চু ভাই...’
Advertisement
চোখের জল মুছে খানিকটা চুপ থাকার পর আবার শুরু করলেন। ‘১৯৯৫ সালে একটি ব্যান্ডদল গড়েছিলেন। তখন এলআরবি অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে নাম পরিবর্তন করা হয়। সেই লিটল রিভার নামটাই আমাকে খুব টানে। আমাদের ব্যান্ড-এর নাম রাখি ফিকেল বয়েজ ব্যান্ড। বাচ্চু ভাইয়ের এলআরবি আর আমাদের এফবিবি। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে আমাদের ব্যান্ডের অভিষেক হয়। তখন কনসার্টে এলআরবি, উইনিংসহ অন্যান্য ব্যান্ডের গান কাভার করতাম। এমনও হয়েছে আমি গান গাইছি অন্যদিকে বাচ্চু ভাই ড্রামস বাজাচ্ছেন। আমি বলতাম বাচ্চু ভাই আপনার গান গাইবো। তখন তিনি বলতেন, আমার লিস্টেরগুলো বাদ দিয়ে গা।’
১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলে বাচ্চু ভাই আমার সঙ্গে বাজিয়েছিলেন। এরপর অনেকবার একসঙ্গে শো করেছি। তখন আমি আজকের আসিফ ছিলাম না। ২০০১ সালে আমার ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবাম প্রকাশের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশ-বিদেশে বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে শো করেছি। অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন বাচ্চু ভাই। আমার সঙ্গে টম অ্যান্ড জেরির মতো সম্পর্ক ছিল। এই ভালো এই খারাপ। ইন্ডাস্ট্রিতে আমিই মনে হয় তাকে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি। কোনও কিছু হলেই বাচ্চু ভাই এইটা করলেন কেন ওইটা করলেন কেন? ভাই বলতেন, আসিফ রাগ করিস না ভাই।’
তিনি বলেন, ‘তার উপর রাগ ছিল না কোনোদিন। অভিমান ছিল। দুজনে মিলেও গেছি বারবার। অনেক কথা, এক জীবনের সেইসব স্মৃতিচারণ করেই কাটিয়ে দেবো।’
এলএ/আরআইপি
Advertisement