অবশেষে সাংবাদিক জামাল খাশোগির মৃত্যুর বিষয়ে মুখ খুলল সৌদি আরব। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় জামাল খাশোগি নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে সৌদি। প্রাথমিক একটি তদন্তের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে বেশ কয়েক জনের সঙ্গে লড়াইয়ের ঘটনায় জামাল খাশোগি নিহত হয়েছেন।
Advertisement
খবরে বলা হয়েছে, খাশোগি নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে সৌদির উপ-গোয়েন্দা প্রধান আহমাদ আল-আসিরি এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমানের শীর্ষ সহকারী সৌদ আল কাহতানিকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
প্রথমবারের মতো প্রাথমিক তদন্তে জামাল খাশোগি নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করে নিল সৌদি। এই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, যা ঘটেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে সৌদি আরব তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ।
খাশোগি হত্যাকাণ্ডে তদন্তের অংশ হিসেবে ১৮ জন সৌদি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। একটি গোল টেবিল বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করাটাই ছিল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সৌদি রাজতন্ত্র দ্রুত এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তিনি দেশটির প্রশংসা করেছেন।
Advertisement
এদিকে, বাদশাহ সালমান দেশটির গোয়েন্দা বিভাগকে ঢেলে সাজাতে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিপরিষদীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন জামাল খাশোগি। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নেয়ার জন্য সেখানে যান। তার প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য এসব কাগজপত্রের প্রয়োজন ছিল। হাতিসকে কনস্যুলেটের বাইরে রেখেই তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। হাতিস সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়ে থাকার পরেও খাশোগি আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকেই জামাল খাঁশোগির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনার পরপরই তুরস্কের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে, কনস্যুলেটের ভেতরেই জামাল খাশোগিকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তুরস্কের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল রিয়াদ।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সৌদির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের ফোনে আলাপ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সৌদির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে খাশোগি নিহতের বিষয়টি জানানো হয়। খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগির সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তির সংঘর্ষ ঘটে। এর ফলেই তার মৃত্যু হয়। খাশোগি হত্যার বিষয়ে তদন্ত এখনও চলছে এবং এই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়। একই সঙ্গে দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
Advertisement
খাশোগিকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া সৌদ আল-কাহতানি সৌদি রাজপ্রাসাদের একজন প্রভাবশালী সদস্য এবং প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমানের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা। অপরদিকে, মেজর জেনারেল আহমাদ আল-আসিরি ইয়েমেনের ওপর সৌদি আগ্রাসনের বিষয়ে শীর্ষ মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে ইয়েমেনের ওপর সৌদি পদক্ষেপের বিষয়টি সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছিলেন জেনারেল আসিরি। প্রথম থেকেই তুর্কি তদন্ত কর্মকর্তারা এই দুই ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা বলে আসছে। কিন্তু রিয়াদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
এদিকে হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সৌদির তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তারা জানতে পেরেছে। জামাল খাশোগির মৃত্যু ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে শোকাহত বলে জানানো হয়।
টিটিএন/জেআইএম