ফিচার

নির্যাতিত নারীদের আস্থা জান্নাতুন ফেরদৌস

আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এবং নারী নির্যাতন হয়ে আসছে। যার বিরুদ্ধে প্রথম সংগ্রামে নেমেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বর্তমানে তার দেখানো পথে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। প্রভূত সফলতার দেখাও পেয়েছেন তারা। তেমনই এক আলোর দিশারী জান্নাতুন ফেরদৌস। তাকে নিয়েই আজকের আয়োজন-

Advertisement

পরিচয়: জান্নাতুন ফেরদৌস দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. আমজাদ হোসেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। মা মোছা. আফরোজা খাতুন একজন গৃহিণী। তার ছোট দুই বোন এমএ সম্পন্ন করে সংসার, চাকরি ও ব্যবসায় নিয়োজিত। ছোট ভাই চুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যায়নরত।

পড়াশোনা: এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন রাজশাহী বোর্ড থেকে। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি রেকর্ডসংখ্যক নম্বর অর্জন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। সম্মান পর্যায়ে তিনি ‘স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রভাব : একটি সমাজতাত্ত্বিক সমীক্ষা’ শিরোনামে রিসার্চ মনোগ্রাম সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন: তিনি ২০১২ সালের ১৫ জুলাই নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বদলি হয়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় যান। সেখান থেকে ত্রিশাল উপজেলায় বদলি হন। বর্তমানে রাজধানীতে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরে কর্মরত।

Advertisement

পরিবার: তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও লেখক জিএম তরিকুল ইসলামের স্ত্রী। দাম্পত্য জীবনে জান্নাতুন ফেরদৌস এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। বর্তমানে মেয়ে জান্নাতুন তিয়াসা ও ছেলে তিমনকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।

সংগ্রামের শুরু: জান্নাতুন ফেরদৌস মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণসহ তা বাস্তবায়ন করেন। পরে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজাফর রিপনকে সভাপতি করে সদস্য সচিব হিসেবে তিনি স্কুল বালিকাদের নিয়ে ‘বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ব্রিগেড (বাযৌপ্রবি)’ গঠন করেন। যা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

> আরও পড়ুন- বাংলাদেশি আয়েশার বিজ্ঞানে সাফল্য

ব্রিগেডের পথচলা: ত্রিশাল উপজেলার ধলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাইভেট প্রোগ্রাম হিসেবে ‘Prevention is better than cure’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ১০ জন সদস্য নিয়ে এই ব্রিগেড কার্যক্রমের পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আরও ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩৬ জন সদস্য নিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্রিগেড গঠন করা হয়।

Advertisement

কার্যক্রম: বর্তমানে ১৮টি ব্রিগেডে মোট ১৮৬ জন সদস্য নিয়ে সমগ্র ত্রিশাল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধে নিয়মিত উঠান বৈঠক, ক্লাস ক্যাম্পেইন, শ্রমজীবী-পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে।

আলোকবর্তিকা: তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য ব্যাপক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আলোকবর্তিকায় পরিণত হয়েছেন। যে কারণে গত ২৩ জুলাই মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ লাভ করেছেন। তিনিই জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত একমাত্র নারী।

পুরস্কারের অর্থ: পুরস্কার পাওয়া এক লক্ষ টাকা তিনি ব্রিগেড টিম গঠনের জন্য অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। যা দিয়ে পাঁচটি ব্রিগেড টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৫টি বাল্যবিবাহ বন্ধ ও কয়েকটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করে প্রশংসিত হয়েছে বাযৌপ্রবি।

> আরও পড়ুন- ছোটবেলার স্বপ্ন সফল হয়েছে দীপু মনির

প্রশংসা: ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার জি.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করলে সামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে তারা কাজ করছেন। তাই বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি পেতে এ ব্রিগেডের কার্যক্রম একটি মাইলফলক।’ এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘জান্নাতুন ফেরদৌসের কাজ প্রশংসনীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রাপ্ত জনপ্রশাসন পদক অধিদফতরের জন্য গৌরবের বিষয়। তার সবাই কাজ করলে বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের বিষয়টি দেশব্যাপী কমে আসবে।’

তিনি যা বলেন: জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, ‘উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে আমি বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানি মুক্ত সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ কাজে সব মহলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

এসইউ/জেআইএম