এক মুসলমানের ওপর আপর মুসলমানের কিছু হক বা অধিকার আছে। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা বা তাকে দেখতে যাওয়া একটি। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া কিংবা তার সেবা করার প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান কী?
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তখন তাকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা-যত্ন করা অন্য মুসলমানের হক হয়ে যায়। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা যত্ন করতে এবং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করতেও তাগিদ দিয়েছেন।’
প্রিয়নবি নির্দেশনা অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ খবর নেয়া, সেবা-যত্ন করা এবং তার জন্য দোয়া করাও মুসলমানের ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়।
ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে রোগ-ব্যাধি দেন। যারা এ সময় ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদের গোনাহ মাফ করে দেন এবং তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। যারা এ সব মুমিন বান্দার সেবা-যত্ন করে তারাও সমপরিমাণ সাওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হন। ভালো কাজের প্রতিদান এমনই।
Advertisement
আরও পড়ুন > প্রতিশোধ না সবর : ইসলাম কী বলে?
ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তি সেবা-যত্নের বিধান
কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে মানুষকে এ মর্মে জবাবদিহি করতে হবে যে, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন যথাযথভাবে করা হয়েছে কিনা। কেননা অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্নকে স্বয়ং আল্লাহর সেবা-যত্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডেকে বলবেন- হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে (সেবা-যত্ন করতে) আসনি।
Advertisement
মানুষ বলবে- হে রব! আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আমি কিভাবে আপনার সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারনি যে, (তোমার প্রতিবেশি) আমার এক বান্দা অসুস্থ ছিল; তুমি জানা সত্ত্বেও তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবা-যত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম, মিশকাত)
এ কারণেই ইসলামে বিধান হলো কোনো মুসলমানের প্রতিবেশি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। তার সেবা করা আবশ্যক। তাইতো প্রিয়নবি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ও তার সেবা যত্ন করার ফজিলত ঘোষণা করে বলেন-
হজরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমান যখন তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল বাগানে বিচরণ করতে থাকে।’ (মুসলিম, মিশকাত)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যে ইসলামে অসুস্থ প্রতিবেশির সেবা-যত্ন করা আবশ্যক। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন মহান আল্লাহর ইবাদত। দুনিয়ার সফলতা ও পরকালের নাজাতের উপায়ও বটে।
সেবা-যত্নের পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোনো রুগ্ন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যার এখনো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট (মাহরাম হলে তার মাথায় হাত রেখে) ৭বার এই দোয়াটি পড়বে-
أَسْأَلُ اللهَ العَظيمَ، رَبَّ العَرْشِ العَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ
উচ্চারণ : আসআলুল্লাহাল আজিমা, রাব্বাল আরশিল আজিমি, আঁইয়্যাশফিয়াক’
অর্থ : `আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য (সুস্থতা) প্রার্থনা করছি` আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমজি, আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করের অসুস্থ ব্যক্তির সেবা যত্নের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক মুসলমানকে প্রতিবেশি ও সমাজের অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের সেবা যত্ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি