বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা হাবিবুর রহমান (৬৯) বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সিলেটের নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।
Advertisement
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। গত ৭ অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দুই দিন আগে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। আজ শুক্রবার বাদ জুমআ তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমবেত হয়। এক সময় মাঠ লোকে ভর্তি হয়ে গেলে আশপাশের রাস্তাও লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এসময় উপস্থিত জনতাকে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের জন্য চোখের জল ফেলতে দেখা যায়।
Advertisement
জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক বলেন, আজ জুমার দিনে আমরা হারিয়েছি দেশ বরেণ্য এক ইসলামি চিন্তাবিদকে। কাজিরবাজার মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে। যিনি সিলেটের তাওহিদি জনতার অন্যতম নেতা।
তার সঙ্গে আমি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। একসঙ্গে কারাবরণও করেছি। আজ তিনি চলে গেলেন। প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান যে তাওহিদী জনতার শীর্ষ নেতা ছিলেন তার প্রমাণ আজকের লক্ষাধিক মানুষের এ জানাজা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের নেতা বদরুদ্দীন আহমদ কামরান তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন, তিনি বলেন, তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি যখন একটি মসজিদে ইমাম ছিলেন তখন থেকে আজকের প্রিন্সিপাল হাবীব পর্যন্ত আমার সুসম্পর্ক।
তিনি শুধু একজন ইমাম বা আলেম ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ রাজনীতিক। সিলেটের মাটিতে যখনই কোনো অন্যায় কাজ শুরু হয়েছে তিনি ঝাপিয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতবাসী করেন।
Advertisement
জাতীয় পার্টির সংসদস সদস্য এহইয়া চৌধুরী বলেন, মাওলানার মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। তিনি ছিলেন আমাদের মুরুব্বি, আমাদের পরিবারেরও পরামর্শক।
এক সময় সিলেটে স্লোগান দেয়া হতো, বীর মুজাহিদ প্রিন্সিপাল বেঁচে থেকো চিরকাল। আজ তিনি সিলেটবাসীকে এতিম করে চলে গেলেন। তিনি সিলেটে যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। আল্লাহ যেন তাকে কবুল করেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী বলেন, আজ আমরা বীর মুজাহিদ প্রিন্সিপালের জানাজায় হাজির হয়েছি। যিনি কেবল একজন আলেম নন, একটি বড় প্রতিষ্ঠান। যার আন্দোলনে বাতিল পালিয়ে যেত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, সিলেটের শীর্ষ আলেমে দীন মাওলানা শফিকুল হক আমকুনীসহ আরো অনেক আলেম-ওলামা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ বক্তব্য দেন এবং তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘনশ্যাম গ্রামে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের শিক্ষা জীবনের শুরু হয়েছিল ফুলবাড়ির বইটিকর প্রাইমারী স্কুল থেকে। পরে কিছুদিন রুস্তুমপুর কওমি মাদরাসায় পড়ে ভর্তি হন ফুলবাড়ি আজিজিয়া আলিয়া মাদরাসায়।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ফুলবাড়ি মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ফাজিল এবং ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি তার বাবার সূত্রে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হজরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) কর্তৃক খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বরে এক জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজীজুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আত্মপ্রকাশ করে।
পরে তিনি খেলাফত আন্দোলন ছেড়ে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিতি খেলাফত মজলিসে যোগ দিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ইন্তেকালের পর তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির নির্বাচিত হন। মৃত্যুকালে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমিরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
মাওলানা হাবিবুর রহমানের জানাজা শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইউসুফ। জানাজা শেষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কাজিরবাজার মাদরাসার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
আল্লাহ তাআলা বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি