এসেছিল ঘোড়ায় চড়ে। গেলো দোলনায়। মা উমা দেবী চলে গেল আজ। বিষাদের সুর লহরিতে কান্নাতে আওয়াজ। বিসর্জনের মধ্য দিয়েই দেবীকে বিদায় আয়োজনের সমাপ্তি।
Advertisement
দিন কয়েকের জন্য আসা মায়ের। ভক্তমনে আনন্দধারার ফুলঝুড়ি বিলিয়ে দিলে। জগৎ মাতালে। তোমার আলোকছটায় সূচি হলো ধরা। অতপর কাঁদিয়ে চলে গেলে।
মায়ের আগমনে পাড়া-মহল্লায় যেন চাঁদ-তারাও নেমে এসেছিল। তোমার ভক্তকুলে সঙ্গ দিয়ে নেচেছিল প্রকৃতিও। আর সেই তুমিই নাকি আঁধার নামালে বিদায়বেলায়! ভক্তমনে যে আঁধার আজ, তা ঘোচাতে ফি বছরের অপেক্ষা।
ছবি- মাহবুব আলমমর্ত্যে যখন এসেছিলে, তখন চলে তো যাবেই। তোমার পথ রুদ্ধ করে এমন সাধ্য কার! হিমালয়ের দেশে তোমার বাস। যাবে তো সেখানেই। তাই বলে এত তাড়া তোমার! যে বোধনে অগ্নি দিয়ে পবিত্র হলো ভক্ত মন, এক মুহূর্তেই তা আড়াল হয় কী করে!
Advertisement
ও রূপ আড়াল হবার নয়। মায়ের আশীর্বাদ নিয়েই ভক্তের পথচলা। জগৎ মাকে ধারণ করেই সন্তানের আনন্দমেলা।
শারদীয় আনন্দবংশীতে বেদনার সুর বেজেছিল নবমীর ঊষালগ্নেই। নবমীর দিন-রাতেই মহোৎসবের তুঙ্গলগ্ন ঘটে। তাই ঘটেছিল গতকাল নবমীতেও। ঢাকের বাদ্যে ভক্তরা উম্মাদ বনে যায় মণ্ডপে মণ্ডপে। নেচে-গেয়ে আনন্দ ডানা মেলে ধরে সর্বজন। এ আনন্দ যাত্রায় সামিল হয়েছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ সম্প্রীতির এই বাণীকেই ধারণ করেই বাঙালি গ্লানি আর অধর্মকে দূরে ঠেলছে।
ছবি- মাহবুব আলমঅসুরকে (অশুভ শক্তি) হত্যা করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিল মা দুর্গা। অশুভের বিপরীতে শুভর জয় করেছিল মায়ে। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রামে মানুষকে সাহসী করে তোলেন। তিনি মানুষকে মহৎ গুণাবলির প্রতি আকৃষ্ট করেন। মানুষের মনের দৈন্য ও কলুষ দূর করে দেন। শুভ শক্তি প্রকাশের মধ্য দিয়েই বিজয়ার সীমানা সর্বজনীন হয়ে ওঠে। মায়ের বিদায় উৎসবের আনন্দকে আরও অর্থবহ করে তোলে।
শারদীয় আনন্দধারা কাটতে না কাটতেই বেদনার অশ্রুধারায় ভক্তের আকাশ কালো হয়ে উঠল। দশমীর আকাশ যেন বেদনার বাতাসে ভারী হয়ে আসল আজ। ভক্তমনের বেদনার জানালায় মায়ের প্রতিচ্ছবি। যে জানালা দিয়ে শুধু মায়ের চলে যাওয়াই দেখতে হয়, মাকে ফেরাতে আর ডাকা যায় না। অপেক্ষার সেই জানালার ধারে বসেই একটি বছরের প্রহর গুনতে হয়।
Advertisement
মায়ের বিদায় বলে সকাল থেকেই মণ্ডপগুলো ভক্তের মেলায় রূপ নেয়। নতুন পোশাকে নতুন সাজে দেবী বন্দনায় মেতে ওঠে সবাই। ঢাক আর কাঠির মাখামাখিতে ধরণী যেন কেঁপে কেঁপে উঠল দিনভর। আর আনন্দের এই কুঞ্জবনে এরই মাঝে আচমকা বেজে ওঠে মা বিদায়ের বিষাদধ্বনি। বিজয়াদশমীর সুর মাখা সে বিষাদে। বারোয়ারি পূজারে এই দিনে সিঁদুর খেলা চলেছে মণ্ডপ থেকে বাড়ির উঠোনে। সিঁদুরে রাঙা হচ্ছে ত্রয়োস্ত্রীর কপাল। আর ধান-দূর্বায় বিদায় জানিয়ে বলছে, ফের এসো মা।
১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। গত মঙ্গলবার সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় মহাসপ্তমী পূজা, যা দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
ছবি- মাহবুব আলমগত বুধবার কুমারী পূজার পর হয় মহাঅষ্টমীর সন্ধিপূজা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বিহিত পূজার মাধ্যমে মহানবমীর আনুষ্ঠনিকতা শুরু হয়। ভক্তরা সকাল থেকে নগরীর পূজা মণ্ডপগুলোয় ঘুরে-ঘুরে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ ও পূজা-অর্চনা করেন।
বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শুক্রবার শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো এবারের আয়োজনের। সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারে।
এএসএস/জেডএ/আরআইপি