৪৮ ঘন্টা পর ওয়ানডে সিরিজ শুরু। তার আগে শুধু শনিবার আর একটিমাত্র প্র্যাকটিস সেশন বাকি। শুক্রবার জাতীয় দলের কোন কার্যক্রম নেই। ১৫ জনের বহরের তিনজন ফজলে মাহমুদ রাব্বি, সাইফউদ্দীন ও আরিফুল বিকেএসপিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গা গরমের ম্যাচ খেলছেন আর বাকি ১২ জনের ছুটি। তাই ছুটির আমেজে স্টিভ রোডসসহ অন্যান্য কোচিং স্টাফও।
Advertisement
কিন্তু আজ সকাল হতেই একে একে টিম বাংলাদেশের প্রায় সব কোচিং স্টাফই বিকেএসপিতে ছুটে আসলেন। বোঝাই গেল, উদ্দেশ্য-ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে জিম্বাবুয়ানদের খুব কাছ থেকে দেখা।
সবার আগে আসলেন হেড কোচ স্টিভ রোডস। তারপর স্পিন বোলিং কোচ সুনিল জোসি। এরপর পেস বোলারদের গুরু কোর্টনি ওয়ালশ এবং সবশেষে ব্যাটিং কনসালটেন্ট নেইল ম্যাকেঞ্জি। এর মধ্যে হেড কোচ স্টিভ রোডস থাকলেন ম্যাচের পুরো সময়।
শুধু কোচিং স্টাফরাই নন, খেলা দেখতে সাত সকালে বিকেএসপিতে এসে উপস্থিত প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় হেড কোচ স্টিভ রোডস আর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু অনেকক্ষণ কথাও বললেন একান্তে।
Advertisement
বোলিং কোচ ওয়ালশ আর জোসি মাঠ ছাড়লেন হাসিমুখে। তবে পেস বোলিং কোচ ওয়ালস রাজধানী ফিরলেন পরিতৃপ্তি নিয়ে। তার শিষ্য মানে পেসাররাই জিম্বাবুয়েকে ১৭৮ রানে বেঁধে ফেলেছেন।
কিন্তু দুপুরে বিসিবি একাদশের দুই উইকেটের পতন ঘটতেই বাংলাদেশের কোচিং স্টাফদের বড় অংশটা গেলেন চলে। বোঝাই গেল ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি এসেছিলেন দুই নতুন ফজলে রাব্বি মাহমুদ আর মিজানুর রহমান মিজানের ব্যাটিং দেখতে।
কিন্তু হায়, যাদের ব্যাটিং দেখতে সেই ঢাকা থেকে জ্যাম ঠেলে সাভারের জিরানিতে ছুটে আসা আসা; সেই ফজলে মাহমুদ রাব্বি আর মিজানুরের কেউই সুবিধা করতে পারেননি। ফজলে রাব্বি ১৩ রানে আর মিজান ৮ করে সাজঘরে।
তবে হেড কোচ স্টিভ রোডস ঠিকই পুরো সময় মাঠে থাকলেন। কোচ রোডসের বিকেএসপিতে পুরো ম্যাচ দেখা বিফলে যায়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথমবার দলে আসা ফজলে রাব্বি আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা মিজানুরের ব্যাটিং দেখতে এসে হতাশ হলেও স্টিভ রোডস দিন শেষে ফিরে গেলেন সৌম্য সরকারের অনবদ্য শতরান দেখে।
Advertisement
রাব্বি ১ রানে জীবন পেয়ে করেছেন ১৩। আর মিজানও শুরু থেকে আড়ষ্ট হয়ে খেলে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট। জিম্বাবুয়ান ফাষ্টবোলার কাইল জার্ভিসের বলে অনসাইডে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন ফজলে রাব্বি। প্রায় ৩০ /৩৫ ফুট ওপরে ওঠা সেই সহজ ক্যাচ, যা অনায়াসে জায়গায় দাঁড়িয়ে ধরা যায়; তা ধরা দূরে থাক, ফ্লাইট মিস করে বসলেন জিম্বাবুয়ান ফিল্ডার টিরিপানো। তিনি দু হাত নিয়ে যে জায়গায় বল ধরতে গেলেন, বল পড়লো তার ফুট খানেক দূরে।
তারপর জীবন পেয়েও ইনিংসকে বড় করতে পারেননি ফজলে রাবিব। ১৩ রানে বিদায় নিলেন। বোলার ছিলেন সিকান্দার রাজা। ঐ জিম্বাবুয়ান অফস্পিনারের বলে কভারে ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে ক্যাচ তুলে বিদায় রাব্বির।
তারও আগে ফজলে রাব্বির সাথে ভুলবোঝাবুঝিতে পিচের মধ্যে পড়ে গিয়ে রানআউট মিজান। মিড অনে ঠেলে সিঙ্গেলসের আশায় দৌঁড়ে অপর প্রান্তে আসার চেষ্টায় থাকা মিজান রাব্বিকে বাঁচাতে গিয়ে রানআউট হন। অপর প্রান্তে ফজলে রাব্বি পিচের ওপর পড়ে গেলে মিজান সিঙ্গেলস না নিয়ে ফেরার চেষ্টা করে আর পারেননি।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রান না পেলেও সমস্যা হয়নি। বিসিবি একাদশ ৮ উইকেটের সহজ জয়েই মাঠ ছেড়েছে। এ জয়ের প্রথম অংশের নায়ক পেস বোলার ইবাদত হোসেন। ১৯ রানে ৫ উইকেট দখল করে জিম্বাবুয়েকে ১৭৮ রানে বেঁধে ফেলতে মূল ভূমিকা রাখেন লম্বা ছিপছিপে গড়নের পেসার ইবাদত। অপর পেসার সাইফউদ্দীনও পিছিয়ে ছিলেন না। ৩২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ সাফল্যের রূপকার হলেন স্পিনাররা। বরাবর স্পিনারদের দিয়েই জিম্বাবুয়ানদের ঘায়েল করেছে বাংলাদেশ।
কিন্তু আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য আজ বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠের স্পোর্টিং পিচে বিসিবি একাদশের সাফল্যের প্রাথমিক ভীত রচনাকারিরা হলেন পেসার। ইবাদত আর সাইফউদ্দীন মিলে পতন ঘটিয়েছেন আট উইকেটের। বাকি দুই উইকেটও জমা পড়েছে দুই পেসার মোহর শেখ ও ইমরান আলীর পকেটে।
আর প্রধান নির্বাচক নান্নু ও হেড কোচ স্টিভ রোডস দিন শেষ করলেন সৌম্য সরকারের উদ্ভাসিত ব্যাটিং দেখে। তিন নম্বরে নেমে সৌম্য শুধু অনবদ্য শতরানই করেননি, ৫২ রানে দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর বিসিবি একাদশ যখন অনিশ্চিত যাত্রায়, ঠিক তখন হাল ধরেন সৌম্য।
একদম শুরু থেকে আস্থার সাথে খেললেন। জিম্বাবুয়ান বোলাররা এতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি তার ওপর। শুরু থেকে প্রায় একই গতিতে খেলে একবারের জন্য আউট হবার সুযোগ না দেয়া সৌম্যর হাফসেঞ্চুরি হয় ৫৮ বলে। পরের পঞ্চাশ আসে ৫১ বলে। প্রথম পঞ্চাশে বাউন্ডারি ছিল ৬টি । ছক্কা হাঁকান একটি। আর শতরানে বাউন্ডারির সংখ্যা ১৩টি, ছক্কা সেই একটি ।
১৫ জনের দলে নেই, কিন্তু ভালো খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এ ম্যাচে সৌম্যর মত অতবড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে দল জেতানোয় কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন তিনি (৪৮ বলে ৩৩ রিটায়ার্ড নটআউট)। এ ম্যাচের অধিনায়কের সাথে ১১১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দল জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন মোসাদ্দেক। তাই তো দিনের ৬৬ বল আগে জয়ের বন্দরে বিসিবি একাডেমি।
প্রস্তুতি ম্যাচ, যার ফল বেশিরভাগ সময়ই ধর্তব্য নয়। আবার কারো ব্যক্তিগত সাফল্য ও ব্যর্থতাও খুব হাইলাইটস করার কিছু নেই। দিন শেষে সেটা গা গরমের ম্যাচ বলেই গণ্য হয়। হবেও। এখানে কেউ খারাপ খেললেই তিনি ভালো না, আর খুব ভালো খেললেই তিনি খুব ভালো- এমন উপসংহারে উপনীত হওয়াও ঠিক নয়।
তাই ফজলে মাহমুদ রাব্বি আর মিজানুরের কম রানে ফিরে যাওয়াটাকে খুব বাঁকা চোখে দেখাও হয়ত ঠিক হবে না। তারপরও বলা, ফজলে রাব্বি মাহমুদ আর মিজানের কেউই ভালো খেলেননি। সেখানে ১৫ জনের দলের বাইরে থাকা সৌম্য রান পেয়েছেন। সেঞ্চুরি করে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরে এসেছেন।
সৌম্য পারেন। আগেও জানা ছিল। আজ বিকেএসপি মাঠে আবারো প্রমাণ হলো সৌম্যর ব্যাট থেকে এখনো বড় ইনিংস আসতে পারে। সৌম্যর দল জেতানো শতরান করার সামর্থ্যটা আগের মতই আছে। এটাও কিন্তু একটা বড় বার্তা। আজকের প্রস্তুতি ম্যাচ তাই দিল দু'দুটি বার্তা। প্রথম, জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলটিকে স্পিন ছাড়া পেস দিয়েও ঘায়েল বা বধ করা সম্ভব। আর সৌম্য এখনো পারেন দল জেতাতে।
এ বাঁহাতি টপ অর্ডারের ১১৪ বলে ১০২ রানের হার না মানা ইনিংসটি টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের নির্বাচনকে ভুল প্রমাণ করলো, কেউ যদি এমন চাছাছোলা মন্তব্য করেন, তা কি ভুল হবে?
এআরবি/এমএমআর/আরআইপি