ক্যাম্পাস

ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিল করতে সাদা দলের বিবৃতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রদানের আগেই ফলাফল প্রকাশের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে আবার ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ এবং একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে দলটি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি ইউনিটের অধীনে প্রথমবর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়। চারটি ইউনিটের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও গত তিন বছর ধরে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, কর্তৃপক্ষ এবার অভিযোগের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত সম্পন্ন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু এবারও আমরা কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর প্রবণতা দেখলাম। সর্বমহলের সমালোচনার পরিপেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার আগেই ফলাফল প্রকাশ করা হলো। এ ফলাফল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকাশিত ফলাফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের স্বপক্ষে প্রমাণাদি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা মনে করি, ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই প্রয়োজন নয়, এর সঙ্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই অবিলম্বে বিতর্কিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ এবং একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

Advertisement

এদিকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবারও নেয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

ছাত্রলীগের দাবিগুলো হলো-

যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় নেয়া অথবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষা নেয়ার মধ্য দিয়ে ভর্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা।

ডিজিটাল জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস অথবা অসদুপায় অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বনকারী, পরীক্ষার্থী ডিজিটাল জালিয়াতি কিংবা প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ভর্তিকৃত সকল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের ভর্তি বাতিল করা।

Advertisement

আধুনিক যুগোপযোগী মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার স্বার্থে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে পলিসি ডিবেটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করা।

অপরদিকে এই পরীক্ষার ফল বাতিল এবং ঢাবির উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বৃহস্পতিবার বিকেলে ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে শিক্ষা সচিব ও ঢাবি উপাচার্যের প্রতি এই নোটিশ পাঠান।

গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। যে অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে ডিজিটাল জালিয়াতি হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়ে প্রথমে সোমবার এই পরীক্ষার ফল স্থগিত করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার ঠিকই ফল প্রকাশ করা হয়। অপরদিকে ইউনিটটিতে নিকট অতীতে সর্বোচ্চ ফলাফল হয়েছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে তিনগুণ। ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী এতে পাস করেছেন।

এমনকি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে প্রথম হওয়া ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটে ফেল করেছিলেন। এই শিক্ষার্থীর নাম জিহাদ হাসান আকাশ। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এ নিয়ে শুরু হয় আরও সমালোচনা। প্রশ্নফাঁসের সন্দেহ আরও বাড়ে।

ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

প্রশ্নফাঁসের পর নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানায় বাম ছাত্র সংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠন। অনশন শুরু করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন। তিনি এখন অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।

এমএইচ/জেডএ/জেআইএম