‘ঈশ্বর বলতে কিছু নেই। কেউ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেনি। আমাদের ভাগ্যও কেউ পরিচালিত করে না।’ কথাগুলো বলেছেন বিশ্বের খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। নিজের সর্বশেষ বইয়ে তিনি এসব বলেছেন।
Advertisement
বইটিতে রয়েছে বিশ্ব সৃষ্টির কারণ, ভিনগ্রহের প্রাণি এলিয়েনের বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশে বসতি স্থাপন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। ‘বিগ অ্যানসারস টু দ্য বিগ কোয়েশ্চনস’ শীর্ষক বইটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রকাশক জন মুরে ।
বইটির ‘আসলে কি ঈশ্বর বলে কিছু আছে’ শীর্ষক চ্যাপ্টারে স্টিফেন হকিং লিখেছেন, ‘শতাব্দী ধরে একটা বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, আমার মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যারা একটা অভিশাপের মধ্যদিয়ে দিয়ে জীবন কাটাই-তাদের এ শারীরিক অক্ষমতা নাকি ঈশ্বর প্রদত্ত। ভালো কথা, আমি মেনে নিলাম এটা সম্ভব। তবে আমি এটা অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে পছন্দ করি। আর আমার ব্যাখ্যাটা হলো প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী।’
তিনি বলেছেন, তিনি ঈশ্বর শব্দটাকে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতো করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ব্যবহার করতে চান। তিনি এটা করেছিলেন প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে। হকিংয়ের মতে, ঈশ্বরকে বোঝা মানে প্রকৃতির নিয়মকে বোঝা।
Advertisement
বইটিতে স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘আমার ভবিষ্যদ্বাণী হলো আমরা এই শতাব্দীর শেষে ঈশ্বর সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হবো।’ তার মতে, বিশ্ব বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়নি। তাই এই বিশ্ব সৃষ্টি করতে ঈশ্বরের দরকার নেই।
তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই যা চাই তা বিশ্বাস করতে স্বাধীন এবং এখানে আমার সবচেয়ে সহজ দৃষ্টিভঙ্গি হলো আসলে ঈশ্বর বলতে কিছু নেই। কেউ এই বিশ্ব সৃষ্টি করেনি এবং কেউই আমাদের ভাগ্যকে পরিচালিত করে না।’
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও কয়েকটি বিষয় ভাবতে প্রলুব্ধ করে। আর সেটা হলো সম্ভবত স্বর্গ বলেও কিছু নেই। এমনকি মৃত্যু পরের জীবন বলেও কিছু নেই। আমি মনে করি, মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে ভাবনার বিষয়টি প্রত্যেকের স্বতন্ত্র। প্রত্যেকে এটা নিয়ে যা খুশি ভাবতে পারে। তবে এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য-প্রমাণ নেই, যেটা দিয়ে প্রমাণ করা যায় মৃত্যুর পর জীবন আছে।’
স্টিফেন হকিং মূলত মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য পরিচিত। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিউরি’র প্রবক্তা তিনি। ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে আলোড়নকারী তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তার সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’।
Advertisement
হকিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক পদ থেকে ২০০৯ সালে অবসর নেন। ২১ বছর বয়স থেকেই দুরারোগ্য মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তবুও বহু বছর যাবৎ তিনি তার গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যান।
বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার পরও তিনি এক ধরনের শব্দ-উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্যে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। হুইল চেয়ারে বসে থাকা এই বিজ্ঞানী ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
এসআর/আরআইপি