‘আপা, লাল রোগী এসেছে, কী করবো?... ঠিক আছে, ফাইল রেডি করেন, আমি আসছি। এ কথোপকথন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থাপিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক এবং সেখানে কতর্ব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার।
Advertisement
ওসিসিতে ভর্তি নারী কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা বুঝাতে সেখানকার কর্তব্যরতরা একে অপরের সঙ্গে কোড ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেন। নির্যাতনের শিকার নারীদের কোড ল্যাংগুয়েজে লাল, নীল ও হলুদ নামে অভিহিত করা হয়।
বিভিন্ন রঙয়ের নামে রোগীর নামকরণের কারণ জানতে চাইলে ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম বলেন, লাল মানে ধর্ষণের শিকার, নীল মানে শারীরিক নির্যাতন ও হলুদ মানে অগ্নিদগ্ধ নারী। লাল, নীল ও হলুদ ফাইলে রোগী ভেদে নির্যাতনের ইতিহাস ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র সংরক্ষিত থাকে।
বুধবার দুপুরে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ওসিসিতে ভর্তি নারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ কিংবা ফলোআপ চিকিৎসার সময় রোগী যেন কিছুতেই ট্রমার শিকার না হন, এ জন্য তারা খুবই সতর্ক থাকেন। রোগীর সামনে বারবার (ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতিতা) এসব শব্দ উচ্চারণ করলে তারা অধিকতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এসব কারণে রোগীকে লাল, নীল ও হলুদ ফাইলের রোগী বলে সম্বোধন করা হয়।
Advertisement
ওসিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নির্যাতনের শিকার নারীর সংখ্যা বেড়েছে। আট শয্যার ওসিসিতে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নির্যাতিত নারীদের মধ্যে লালের (ধর্ষণের শিকার) সংখ্যাই বেশি।
বিলকিস বেগম জানান, ধর্ষণের শিকার মেয়েদের অধিকাংশই কিশোরী। বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। অধিকাংশ মামলায় দেখা যায়, পালিয়ে গিয়ে বিয়ের পর কিশোরীর বাবা মা ‘অপ্রাপ্ত বয়স হওয়ায়’ ধর্ষণের মামলা করেন।
তিনি বলেন, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের অবাধ ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইলের অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, গান ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ ফিল্ম দেখে তারা নিজেদের পরিপক্ব ভাবছে। গোপনে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে করছে।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে বিপথগামী হওয়ার বাস্তব ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণের শিকার চার বছর বয়সী এক শিশুকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। তাকে যেভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা দেখলে যে কেউ ভাববে প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ হয়তো এ কাজ করেছে। কিন্তু আমরা বিস্মিত হই- মাত্র ১০ বছর বয়সী এক ছেলে এ কাজ করেছে। উল্লেখ্য, দেশে আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ানস্পট ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) চালু করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের একটি মুখ্য কর্মসূচি এটি। নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের প্রয়োজনীয় সেবা একস্থান থেকে দেয়ার ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ওসিসি। প্রকল্পের পাইলট পর্বে ২০০১ সালে ঢামেক হাসপাতালে ও ২০০২ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি স্থাপন করা হয়। আর প্রথম পর্বে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি স্থাপিত হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১১ সালে রংপুর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশের সপ্তম ও অষ্টম ওসিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
Advertisement
ওসিসির প্রদত্ত সেবাগুলো হলো-
(ক) স্বাস্থ্যসেবা(খ) পুলিশি সহায়তা(গ) ডিএনএ পরীক্ষা(ঘ) সামাজিক সেবা(ঙ) আইনি সহায়তা(চ) মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং(ছ) আশ্রয় সেবা
এমইউ/জেডএ/এমবিআর/আরআইপি