কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের দেয়া কয়েকটি প্রস্তাবনা অযৌক্তিক এবং একটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে আনার প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি ইসির এজেন্ডায় আসার মতো প্রস্তাব নয়। সুতরাং তার প্রস্তাবগুলো অযৌক্তিক।’
Advertisement
বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। তাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে কমিশনে মতানৈক্য তৈরি হবে না বলেও দাবি করেন কবিতা খানম।
ইসির সভায় মাহবুব তালুকদারের নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কে কবিতা খানম বলেন, নোট অব ডিসেন্ট হয় কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেদিন কমিশনের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। সুতরাং মাহবুব তালুকদার যা দিয়েছেন সেটিকে নোট অব ডিসেন্ট বলা যাবে না। কমিশনে পাঁচজন কমিশনার আছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। কারও ভিন্ন মত থাকতে পারে। সেটাকে কমিশনারদের বিরোধ বলা যাবে না।
কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার কমিশনের সভা ত্যাগ ও তার নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন। বাইরে প্রচার হয়েছে, কমিশনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমরা তা মনে করি না।’
Advertisement
আচরণবিধি সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, আচরণবিধিতে তেমন বড় কোনো ধরনের সংশোধন নেই। বেশি না, সাধারণ কিছু সংশোধন আসছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিরা যেমন সাংসদ, মন্ত্রী, স্পিকার এর নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা নিতে পারবেন না। এটা বিদ্যমান আচরণবিধিতেই আছে। তাই আমরা এই জায়গায় এটা নিয়ে কাজ করব না। তবে তফসিল ঘোষণার আগে যদি আচরণবিধি সংশোধন নাও হয় তবুও নির্বাচনে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সংসদ বহাল থেকে নির্বাচন হবে যেক্ষেত্রে এমপিরা মাঠ পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তখন আপনার কি পদেক্ষপে নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ দেয়ার জন্য আচরণবিধি সুনিশ্চিতভাবে প্রতিপালন করব। আচরণবিধি কেউ না মানলে অবশ্যই জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হবে। যদি আচরণবিধি সঠিকভাবে আমরা প্রয়োগ করি, প্রাথীরা ফলো করে তাহলে সমস্যা হবে না। আর কেউ যদি তা ভঙ্গ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থার সুযোগ থাকবে কমিশনের।
তিনি আরও বলেন, আইন সবার জন্য সমান। তাই আচরণবিধির বাইরে কেউ কিছু করলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই পদেক্ষেপ নেবে।
আরও পড়ুন >> তফসিলের আগেই দেশে ফিরবেন মাহবুব তালুকদার
Advertisement
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সভায় নিজের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ না পাওয়ায় গত সোমবার (১৫ অক্টোবর) ‘অপমানিত বোধ করেছেন’ বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার। পরে সংবাদ সম্মলনে বলেন, ‘সভায় কথা বলতে না দেয়ায় তার বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।’
এর আগে গত ৩০ আগস্ট কমিশনের ৩৫তম সভা থেকে বের হয়ে আসেন ইসি মাহবুব তালুকদার। সেই সময় তিনি ইভিএম কেনার বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়ে সভা বর্জন করেন।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের পাঁচ সদস্য শপথ নেয়ার পর থেকে কমিশনে মতবিরোধ দেখা দেয়। তবে এটি মূলত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের। জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ৩৩ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কমিশনে মতবিরোধ তৈরি হয়।
আরও পড়ুন >> ‘বিভেদ’ নিয়ে কথা বলতে নারাজ সিইসি
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা দাবি করেন, ‘তাদের মধ্যে এ মতবিরোধ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
এইচএস/এমএআর/আরআইপি