খেলাধুলা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ধারাবাহিক হতে চান লিটন

ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ব্যাট নিয়মিতই কথা বলে। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠলে কেন যেন খেই হারিয়ে ফেলেন লিটন কুমার দাস। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে আসা অমিত সম্ভাবনাময়ী এই ব্যাটসম্যান অবশেষে যেন নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে দুরন্ত এক সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছিলেন ১২১ রান। শুধু সেঞ্চুরিই নয়, সঙ্গে আত্মবিশ্বাসটাও জন্ম নিয়েছে যে, ‘আমিও পারবো।’

Advertisement

সেই আত্মবিশ্বাসই এখন লিটন কুমার দাসের সবচেয়ে বড় পুঁজি। যার বলে বলিয়ান হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে এসেই একটি ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে দিয়েছেন তিনি। করেছেন ২০৩ রান। যদিও চলতি বছরের শুরুতেই বিসিএলে ২৭৪ রানের একটি ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি।

তবে এবারের ধারাবাহিকতাটা শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ধরে রাখতে চান বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি, তখন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে থাকি। ওই জিনিসটাই ঘাটতি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আমি চেষ্টা করছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও যেন ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যেতে পারি।’

এশিয়া কাপে সেঞ্চুরি হলো। দেশে ফিরে এসেই এনসিএলে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি। নিসন্দেহে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেঞ্চুরিটাই লিটনের কাছে বড়। তবুও তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, কোনটা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে? জবাবে লিটন বললেন, ‘অবশ্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেঞ্চুরি বেশি গুরুত্ববহ। আপনারাও ভাল জানেন, আমি অনেক দিন ধরেই ব্যাকফুটে ছিলাম। পারফর্ম করাটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একই সাথে আমার জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি, এটা আমার জন্য অনেক ব্যাপার।’

Advertisement

ব্যাটিং পাওয়ার প্লেটা বেশ কাজে লাগাতে পারেন লিটন। বিষয়টা অনেকের জন্যই হয়তো সহজ নয়। কিন্তু লিটন এটাকে সহজে পরিণত করেছেন। কিভাবে পারলেন? এর রেসিপিই বা কি? জানতে চাইলে লিটন দাস বলেন, ‘আমার খেলার ধরণটাই এমন। রেসিপিটা যে কি, সেটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। আমার ন্যাচারাল খেলার ধরণটাই এমন।’

লিটন এশিয়া কাপের আগে বলে গিয়েছিলেন, বড় ইনিংস খেলে বড় খেলোয়াড়রা। এবার তো নিজেই বড় ইনিংস খেললেন। নিজের ভেতর অনুভুতিটা কি কিংবা নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও বড় খেলোয়াড় হইনি (হাসি); কিন্তু আমি চেষ্টা করব, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিয়মিত পারফর্ম করার।’

বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে এশিয়া কাপের ফাইনালে এসে সেঞ্চুরি পেলেন। এটা কি নিজের সামর্থ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে? জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘আমি বলবো না যে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস আছে। তবে আগে থেকে একটু চাপ মুক্ত অবস্থায় আছি, এটা বলতে পারেন। আর নিজের প্রতি একটু আত্মবিশ্বাস এসেছে। যখন ভাল কিছু করি, তখন নিজের ভেতর এই জিনিসটা আসেই।’

তাহলে কি এশিয়া কাপের ফাইনালে করা সেঞ্চুরি ক্যারিয়ার বদলে ফেলা ইনিংস? জবাবে লিটন বলেন, ‘আমার কাছে এতটা মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয়, প্রতিদিন প্রতিটা ম্যাচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা সত্যি, একটি ম্যাচ অনেকের ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে; কিন্তু আমাকে পরের ম্যাচে কিন্তু আবার শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। আমার চেষ্টা শূন্য থেকে বড় কিছু করা। ওটা নিয়ে এখন আশা করে বা চিন্তা করে কোন লাভ নেই।’

Advertisement

এসেই ২০০ রান করলেন এনসিএলে। কিভাবে? লিটনের জবাব, ‘আমি ওইটাই বললাম, একজন ক্রিকেটার পারফর্ম করলে মাথা থেকে সেই জিনিসটা সরে যায়। ক্রিকেট তো সম্পূর্ণ মানসিকতার খেলা। মানুষ বলে, মন যত পরিস্কার থাকবে তত ভাল খেলবেন। যেহেতু পারফর্ম করিনি, তখন মনে নিজের সামর্থ্য নিয়ে একটু প্রশ্ন থাকেই। আর পারফর্ম করার পর মানসিকভাবে একটু চাপ মুক্ত হওয়া যায়। এই জন্য হয়তো ভাল হয়েছে।’

তামিম না থাকায় লিটন সিনিয়র, কিভাবে দেখছেন এই ব্যাপারটাকে ? ‘আমিও যে দলে নিয়মিত ছিলাম, তাও না। তামিম ভাই ছিল নিয়মিত। তার সাথে সাথে সবাই আসা যাওয়ার মধ্যে ছিল। আমি নিয়মিত হওয়ার কোন সুযোগই ছিল না। আমার সাথে যে সঙ্গী হবে, সেও নতুন হবে। আমিও নতুন। হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে একটু ভাল জায়গায় আছো হয়তো। কিন্তু আমি আগেও বলেছি, প্রতিটা ম্যাচ নির্ভর করে সেই দিনের ওপরে। হতে পারে পরের ম্যাচে আমি শূন্যও করতে পারি। সেই আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোন লাভ নেই।’

এশিয়া কাপের আউট নিয়ে কিছু বলার আছে? কিংবা আরও কিছুক্ষণ ব্যাট করার আক্ষেপ আছে মনে? ‘হ্যাঁ, আরও কিছুক্ষণ খেলতে পারলে ভাল হত। দলের জন্য ও আমার জন্য। আর আউট নিয়ে কিছু বলার নেই। আম্পায়ার যেহেতু আউট দিয়েছে, সেটা আউটই।’

পূজার ছুটিতে ক্যাম্প করার অনুভূতি? ‘এক্সিলেন্ট, খুব ভাল (হাসি)। না, তেমন না। গত দুই বছর ধরে তো মাঠেই ছিলাম। এখন দেশে, দুই বছর দেশের বাইরে ছিলাম। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। পেশাদার প্লেয়ারদের একটু ছাড় দিতেই হবে।’

প্রত্যাশার চাপ কি আছে? লিটন বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই। কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতেও হবে। আমিও জানি যে আমাকে রান করতে হবে। দলের সদস্যরাও চাইবে, যেহেতু আমি ভাল খেলেছে সেটা যেন ধরে রাখি। এটা দুই দিক দিয়েই থাকবে।’

আইএইচএস/জেআইএম