ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যাটিংয়ের শেষ কথা হলেন স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোতে দোর্দন্ড প্রতাপে ব্যাটিংয়ের একেকটি ইতিহাস রচিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান এ কিংবদন্তি। ৫২ টেস্টের ক্যারিয়ারে রান করেছেন প্রায় ১০০ (৯৯.৯৪), গড়ে। ব্যাটিং করা ৭০ ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ২৯টি সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৩৩৪ রানের।
Advertisement
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৩০ সালের অ্যাশেজে খেলেছিলেন ৪৪৮ বলের সে ম্যারাথন ইনিংসটি। যা কিনা দীর্ঘ ৭৩ বছর ধরে ছিলো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। তবে ব্র্যাডম্যানের এ রেকর্ডের ৬৮ বছর পরে, আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে রেকর্ডটি ভাঙার সুযোগ পেয়েছিলেন তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মার্ক টেলর।
কিন্তু স্যার ডনের সম্মানেই ঠিক ৩৩৪ রান করেই দলের ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন টেলর। আজ থেকে ২০ বছর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন অজি অধিনায়ক।
ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মার্ক টেলর। নিখাঁদ ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাট করছিলেন মনের সুখে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসবিহীন পাকিস্তান বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে টেলর ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিংটাই করছিলেন সে ম্যাচে।
Advertisement
১৫ই অক্টোবর শুরু হওয়া ম্যাচে টানা দুদিন ব্যাটিং করেন টেলর। জাস্টিন ল্যাঙ্গার ১১৬ করে আউট হন। রিকি পন্টিং অপরাজিত থাকেন ৭৬ রানে। আর টানা দুদিন ব্যাট করা টেলরের রান দ্বিতীয় দিন শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩৪ রানে। যা কিনা তখনো পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
আর মাত্র ১ রান করলেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতায় ঢুকে যেতেন টেলর। কিন্তু তিনি বেঁছে নেন স্যার ডনকে সম্মান জানানোর পথটি। যার ফলে ৪ উইকেটে ৫৯৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনে আর ব্যাট করতে না নামার সিদ্ধান্ত নেন টেলর। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। সৃষ্টি করেন স্পোর্টসম্যানশিপ ও সাবেক খেলোয়াড়ের প্রতি সম্মানের এক অনন্য নজির।
তবে টেলরের এ ঘটনাটি যে পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো না তা পরে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। কারণ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষ ওভার শুরুর সময় তার রান ছিল ৩৩২। সে ওভারে ২ রান নিয়ে তিনি পৌঁছে যান ৩৩৪ রানে। দিনের শেষ বলে দারুণ এক শট করেছিলেন টেলর, কিন্তু ত্রিশ গজের মধ্যে ইজাজ আহমেদ সেটি ঠেকিয়ে দিলে রানবঞ্চিত হন টেলর। ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকেই দিন শেষ করেন তিনি।
পরে ড্রেসিংরুমে ফিরে তার মাথায় আসে ডন ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রানের ইনিংসের কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেন আর ব্যাট করবেন না, ভাঙবেন না ডনের রেকর্ড। যেই ভাবা সেই কাজ, রাতারাতিই পাকিস্তান দলকে জানিয়ে দেন তৃতীয় দিনে আর ব্যাট করতে নামবে না অস্ট্রেলিয়া, ভাঙা হবে ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড।
Advertisement
টেলরের এ কীর্তিতে তাকে প্রশংসায় ভাসান বিশ্বের ক্রিকেট ভক্ত, বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে ছিলেন স্বয়ং ডন ব্র্যাডম্যানও। টেলরকে এক চিঠিতে ব্র্যাডম্যান লিখেন, 'বিদেশের মাটিতে ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলায় আমার পক্ষ থেকে তোমাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এটা তোমার মহানুভবতা যে তুমি ঠিক আমার করা ৩৩৪ রানেই নিজের ব্যাট থামিয়ে দিয়েছো। স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য উদাহরণ।'
১৯৯৮ সালে টেলর ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রানের রেকর্ড না ভাঙলেও, ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঠিকই এ রেকর্ডে নিজের নাম বসিয়েছেন ম্যাথু হেইডেন। করেছিলেন ৩৮০, যা কি-না এখনো অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
তবে ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে টেলরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন তৎকালীন অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে ৩২৯ রানে অপরাজিত থাকতেই ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ক্লার্ক।
এসএএস/এমএস