দেশজুড়ে

প্রশাসন অভিযানে বের হলেই মিস কল দেয়া হয় জেলেদের

জেল-জরিমানা দিয়েও থামানো যাচ্ছে না মা ইলিশ শিকার। বরিশালের মেঘনা, জয়ন্তী, আড়িয়াল খাঁ, নয়াভাঙ্গনী, সুগন্ধা, সন্ধ্যাসহ বিভিন্ন নদীতে অবাধে চলছে মা ইলিশ শিকার।

Advertisement

সূত্র জানায়, প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু চক্রের সহায়তায় স্থানীয় মহলের ছত্রছায়ায় জেলেরা ইলিশ শিকার করায় প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শতভাগ সফল হচ্ছে না।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালিয়ে মা ইলিশ ধরার দায়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জেল জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। তারপরেও জেলেরা নদীতে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছেন।

মুলাদী উপজেলার জয়ন্তী, আড়িয়াল খাঁ ও নয়াভাঙ্গনী নদীতে জেলেরা বিশেষ কৌশলে মাছ ধরছেন। স্থানীয় মহলের সহায়তায় প্রশাসনের লোক পৌঁছানের খবর পৌঁছে যায় তাদের কাছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মৎস্য অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান চালানোর সময় তাদের নজরে কোনো মাছ ধরার নৌকা চোখে না পড়লেও তাদের পেছনে পেছনে জাল ফেলে জেলেরা।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন কিংবা থানা পুলিশ উপজেলা সদর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের কাছে সংবাদ পৌঁছে যায়। আর যে যার মতো করে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, নাজিরপুর নৌ পুলিশ ও বোয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জেলেদের ইলিশ শিকারে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসারের নেতৃত্বের অভিযানে বের হলেই নৌ পুলিশের কয়েকজন সদস্য স্থানীয় জেলে প্রতিনিধিদের মোবাইল ফোনে মিসড কল দেয়। ওই সংকেত পেলেই জেলে প্রতিনিধিরা সাধারণ জেলেদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। আর একাজ করার জন্য নৌ পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ এবং জেলে প্রতিনিধিরা সাধারণ জেলেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জেলেরা মাছ ধরতে পারলেই হলো। বিক্রির জন্য তাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। সাধারণ ক্রেতারা নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেয় মাছ কেনার জন্য। তাই বাজারে ইলিশের দেখা না মিললেও রাস্তা-ঘাটে মোটরসাইকেলের পেছনে ব্যাগে দেখা মেলে ইলিশের। নদীতে জেলেদের নৌকা দেখে মনে হয় তাদের মধ্যে আনন্দের ছোয়া লেগেছে।

Advertisement

তবে এদের মধ্যে মৌসুমি জেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সাধারণ জেলেরা। যারা ক্ষেত-খামারে কাজ করেন, স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেন তারাও নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ শিকারের জন্য নৌকা ভাড়া করেন। অনেকে ঢাকার কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন ইলিশ শিকার করার জন্য। মৌসুমি জেলেদের কয়েকজন ইতোমধ্যে প্রশাসনের হাতেও ধরা পড়েছে।

মুলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খেয়া পাড়া-পাড়ের সময় আড়িয়াল খাঁ (ছৈলা) নদীতে যতদূর চোখ যায় তার মধ্যে ১ থেকে দেড়শ জেলে নৌকা দেখতে পান। আর প্রশাসনের ট্রলার দেখতে পেলেই নৌকাগুলো খালের মধ্যে আত্মগোপন করে। এসব জেলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালিয়ে শতভাগ সফল না হতে পারলেও প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মুলাদী থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদ আহমেদ তালুকদার জানান, নদীতে অভিযান পরিচালনা করা পুলিশের নির্ধারিত দায়িত্ব না হলেও মৎস্য অফিসকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য থানা পুলিশ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাজদার রহমান’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ শিকার বন্ধে জেলায় ৩৫টিরও বেশি টিম করা হয়েছে। ৩৫টি টিমের সদস্য সার্বক্ষনিক নদী পাহারা দিচ্ছে। এছাড়া নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরাও নদীতে টহল দিচ্ছেন। মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষেধাজ্ঞার সময় আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকারের দায়ে অভিযানের প্রথম সপ্তাহে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১৯৩ জন জেলেকে জেল জরিমানা করা হয়েছে । সাইফ আমীন/এমএএস/পিআর