মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর শিববাড়ীর মন্দির সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর এবং গোছালো। প্রায় ১৫০ বছরের পরিক্রমায় এ বছরও শিববাড়ীতে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। প্রাচীন কারুকার্যময় মন্দিরের স্হাপত্য শৈলী এক অপরূপ নিদর্শন কাদিপুর শিববাড়ী যা আকর্ষণ বাড়ায় সবার মনে।
Advertisement
মন্দিরের পথে প্রবেশের আগেই অনেক দূর থেকে দেখা পাবেন সুউচ্চ চূড়ার। পথে দেখা পাবেন ভৈরবের মন্দিরের। সেখান থেকে কিছুদূর এগিয়ে গেলে দেখা পাবেন মূল মন্দিরের। সেখানে দর্শন পাবেন দেবী দুর্গার। তা ছাড়া শিব, মনসা, বালি, ভৈরব, শীতলা, চামুণ্ডা, শনিসহ দেব দেবীর মন্দির বিদ্যমান এখানে।
এখানে দেবী দুর্গা ছাড়াও শিব মনসা, বালি, ভৈরব, শীতলা, চামুণ্ডা, শনিসহ দেব-দেবতার পূজা করা হয়। তাই সারা বছর এই মন্দরে ভক্তদের ভিড় লেখেই থাকে।
কাদিপুর মন্দিরের নয়নাভিরাম নানা কারুকার্যময়ী শৈল্পিক আঁচড় আর চারপাশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন কাড়ে আনন্দ-আবেগে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হিন্দু ধর্মের লোকজন দুর্গাপূজা এলেই এখানে আসেন। দুর্গাপূজা ছাড়াও বছরজুড়ে ভক্তদের মানত আর ওখানে আসা-যাওয়ার দৃশ্য লক্ষণীয়। তবে দুর্গাপূজার সময় মৌলভীবাজারের পাচগাঁওয়ের মতো এখানেও লাখো ভক্তের আগমন ঘটে। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়।
Advertisement
জানা যায়, বড়বাড়ির (শিববাড়ীর) লোকেরা ছিলেন জমিদার পরিবারের। তাদের একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদারি থাকলেও জমিদারি শাসন উচ্ছেদের পর তাদেরও অন্য জমিদার পরিবারের মতো পড়তে হয় চরম আর্থিক দৈনতায়। ফলে পূর্বেও বনেদী পূজা অর্চনার আকাশছোঁয়া জৌলুস হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর প্রভাবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে মোটেই ঘাটতি পড়েনি। ধর্মীয় বিধি-বিধান লঙ্ঘন না করেই পূজা-পার্বণ অব্যাহত ছিল। গত এক দশক থেকে মন্দিরটিতে আগের জৌলুস ফিরে এসেছে। রাস্তা থেকে একেবারে মন্দিরের ভেতর পর্যন্ত আধুনিকতায় শিল্পির নানা কারুকার্যে সাজানো হয়েছে মন্দিরকে। সিলেট বিভাগের মধ্যে সব থেকে সুন্দর মন্দির এটি।
কাদিপুর শিববাড়ী ইতিহাস সম্পর্কে এলাকায় লোকমুখে প্রচলিত আছে এই বংশের কোনো এক বংশধর তাদের দীঘির পাড়ে বেল গাছের নিচে বসে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন।
শিবের সাধনা করলেও তখন কোনো শিবলিঙ্গ এ বাড়িতে ছিল না। পরবর্তী সময়ে পুলক সোমের তপস্যার ফসল হিসেবে প্রায় ১৫০ বছর আগে শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। লিঙ্গটি পাওয়ার পর উপযুক্ত স্থান না থাকায় পুরোনো মন্দিরটি সংস্কার করে ওই মন্দিরেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়। শিবলিঙ্গটি পাওয়ার গল্প ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন থেকেই আজ পর্যন্ত ভক্তরা ওখানে শিবলিঙ্গটি দর্শন করতে আসেন। শিলাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিনই মন্দিরে চলতে থাকে পূজা অর্চনা, ভোগ, আলতি, আরতি। ফুল, ফল, বিল্বপত্র, ভোগ, নৈবদ্য, ধূপ, দীপ ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়মিত চলে দেব দেবীর আরাধনা।
পূজার সব রীতি মেনে চলায় ভক্তদের ধারণা এখানে দেবীর উপস্থিতি থাকে। তাই সিলেট বিভাগসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে পূজা দেখতে আসেন ভক্তরা। এই মণ্ডপকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখানে মেলা বসে। বিভিন্ন ধর্মীয় জিনিসপত্রের ও দেবদেবীর ছবি মূর্তিসহ কয়েকশ দোকানে বেচাকেনা হয় খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, নাড়ু, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুনঝুনি আরও অনেক কিছু।
Advertisement
প্রতি বছরের মতো এবারও পূজার ৩ দিনে লাখো ভক্তের আগমন ঘটবে বলে ধারণা করছেন পূজা কমিটি। তাই প্রশাসনও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল জানান, প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তেমনি লোক সমাগম বেশি হওয়ায় কাদিপুর মন্দিরে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে, সঙ্গে থাকবে গ্রাম পুলিশ এবং সাদা পোশাকে পুলিশের টিম।
রিপন দে/এমএএস/পিআর