প্র্যাকটিস সিডিউলে লিখা ছিল, সকাল নয়টায় শেরে বাংলায় স্কিল ট্রেনিং। তার আধ ঘন্টা আগে মানে সকাল সাড়ে আটটায় ছিল রিপোর্টিং। হোম অফ ক্রিকেটে ড্রেসিং রুমে রিপোর্টিং শেষে ‘টিম বাংলাদেশের’ একটা ছোট্ট টিম মিটিংও হলো। যা চললো আর কিছুক্ষণ। সকাল সাড়ে নয়টার কয়েক মিনিট পর একে একে ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন ক্রিকেটাররা। যথারীতি শুরুতেই শরীর গরম করে নেয়া। হালকা ওয়ার্ম আপ-স্ট্রেচিং। তার পরপরই তিন ভাগে বিভক্ত ক্রিকেটাররা। তাও এক মাঠে নয়। তিন ভেন্যুতে।
Advertisement
এক গ্রুপ চলে গেল সোজা শেরে বাংলা লাগোয়া ইনডোরে। একটা দল থাকলো শেরে বাংলার ভিতরে। আর অন্য এক দলকে নিয়ে দুই বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও সুনিল জোসি চলে গেলেন একাডেমির উত্তর দিকের নেটে। সেখানে লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, ইমরুল কায়েস, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আরিফুল হক ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন একে একে নেটে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করলেন।
১৫ জনের দল, কিন্তু প্রথম দিন ১৩ জন প্র্যাকটিসে। পেসার রুবেল হোসেন আর অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের জ্বর। তাই তারা দুজন অনুপস্থিত। ১৩ জনের বহর তিন ভাগে। একটু গোলমেলে ঠেকছে, তাই না?
হ্যাঁ, একটু গোলমেলে ঠেকারই কথা। ১৩ জনের বহরকে তিন ভাগে ভাগ করা এবং তিন ভেন্যুতে আলাদা প্র্যাকটিসের মানে কি? খালি চোখে মানে যতই জটিল মনে হোক, আজকের প্রেক্ষাপটে এবং বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস সিডিউলে মোটেই জটিল নয়। ক্রিকেটাররা প্রথম দিন প্র্যাকটিস শুরুই করলেন তিন ভাগে তিন রকমের স্কিল ট্রেনিং দিয়ে। তাতেই মিললো নতুনত্বর ছোঁয়া।
Advertisement
এতকাল জানা ছিল, প্র্যাকটিস শুরু মানেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর নেটে ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের সাথে ওয়ানডে সিরিজের আগে আজ শেরে বাংলায় প্রথম থেকেই টাইগারদের প্র্যাকটিসের ধরণ গেল বদলে। চিরায়ত ধারা থেকে বেরিয়ে এক সাথে তিন ধরণের স্কিল ট্রেনিং হলো।
এক গ্রুপ শেরে বাংলার সেন্টার উইকেটে ‘রানিং বিটুইন দ্যা উইকেট’ প্র্যাকটিস করলেন বেশ কিছুক্ষণ। আবার ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সিঙ্গেলস নিয়ে খেলার কৌশল বাতলে দিলেন অনেকটা সময়।
সীমিত ওভারের ফরম্যাট মানেই যে শুধু চার ও ছক্কা হাঁকানো তথা ‘বিগ হিট’ নেয়া নয়, তা বোঝানোর পাশাপাশি সমীহ জাগানো বোলিংয়ের মুখে কিভাবে সিঙ্গেলস নিয়েও রান গতি সচল রাখা যায়, সে প্র্যাকটিসটাও হলো।
বলার অপেক্ষা রাখে না, চাপের মুখে এবং বিশেষ করে প্রতিপক্ষ বোলাররা যখন চেপে বসেন, ঠিক তখন বাংলাদেশের রানের চাকা স্লথ থেকে স্লথতর হয়ে যায়। এমনও দেখা যায়, চার-পাঁচ থেকে একেবারে কমকে কমতে তিনে নেমে আসে। ঐ সময় ঝুঁকি নিয়ে তেড়েফুড়ে বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে যে সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলেও রান গতি চার-পাঁচে রাখা যায়, সেই মানসিকতা ও অভ্যাস আর চর্চাই কম টাইগারদের।
Advertisement
সমালোচকদের ভাষায়, সে কাজে এখনো তেমন দক্ষ নন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এশিয়া কাপেও তা দেখা গেছে। ভারতের সাথে লিটন দাস আর মেহেদি মিরাজের প্রথম উইকেটে ২০.৫ ওভারে ১২০ রানের জুটি গড়ার পর প্রতিপক্ষ বোলারদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে মজবুত ভীতের ওপর দাঁড়িয়েও বাংলাদেশের মিডল অর্ডাররা বিপদ ডেকে এনেছিলেন। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি বুদ্ধি খাঁটিয়ে কৌশলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্বচ্ছন্দ ব্যাট চালনা এবং রান তোলার গতি কমিয়ে আনেন।
অভিজ্ঞ ও কুশলী রোহিত শর্মা এবং ধোনি এক সময় মিড অফ-মিড অন ফিল্ডারদের ওপরে এনে চার থেকে পাঁচজন ফিল্ডারকে ৩০ গজের বৃত্তর ভিতরে রেখে বোলারদের উইকেট সোজা ওপরে ওপরে বোলিং করার পরামর্শ দেন। তাতে করে সিঙ্গেলস নেয়া কঠিন হয়ে যায়। বাউন্ডারি হাঁকানো ছাড়া রান গতি সচল রাখাও হয়ে যায় কঠিন।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ঐ সময় খানিক রয়ে সয়ে ফাঁকা জায়গায় বল ঠেলে সিঙ্গেলস ও ডাবলসে না খেলে ৩০ গজের ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারতে প্রলুব্ধ হন। আর তখনই ঘটে বিপর্যয়। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ দুজনই স্লগ করতে গিয়ে অকাতরে উইকেট দিয়ে আসেন। তাতেই রান গতি যায় কমে। উইকেটের পতনও ঘটে বেশ কটি। তিন তিনজন ব্যাটসম্যান তড়িঘরি করে রান আউটও হয় যান।
সেই ভুল গুলো শুধরে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটের উপযোগি ও আদর্শ কলা কৌশল রপ্ত করার প্রয়াস এবার শুরু থেকেই। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে সোমবার সকালের প্র্যাকটিস সেশনে সেই সব ভুল সংশোধনের চেষ্টাই হলো।
এআরবি/এমএমআর/পিআর