জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধন চেয়ে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন

সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় আপত্তি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। সোমবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ১১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

Advertisement

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন প্রমুখ।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হওয়ার আগ থেকেই এই আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম। আমরা মনে করি এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। কিন্তু বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগত নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমও পরিপন্থী। আমরা চাই আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হোক।’

এ সময় তিনি সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে ৭টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

Advertisement

সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫,২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারায় সংশোধন করতে হবে। এবং এই সংশোধনীগুলো বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে।

পুলিশ বা অন্য সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যাবে, কিন্তু কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন এই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

সংবাদমাধ্যমে পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে। এবং সংবাদমাধ্যমে পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবী দ্বারা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।

লিখিত বক্তব্য শেষে মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা আশা করবো আমাদের এই দাবিগুলো সরকার গ্রহণ করবেন এবং আগামী সংসদ অধিবেশনেই যথাযথ সংশোধনী করবেন।

তিনি বলেন, অনেক মন্ত্রী বলছেন, আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। তবে আমরা বলবো, আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। আমরা আলোচনায় গিয়েছি, একটা বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি কিন্তু বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনও হয়নি। আলোচনার দরজা খোলা শুনে আমরা খুশি, আমরাও আলোচনা করতে চাই, তবে সেটা শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা হলে হবে না। এটা হতে হবে গ্রহণযোগ্য আলোচনা, যেটা সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।

এর আগে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজকের (সোমবার) এই মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় সম্পাদক পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘গত ২৯ সেপ্টেম্বরে আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। তারপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, উদ্বেগের বিষয়গুলো ৩ অক্টোবর অথবা ১০ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করে আমাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার শুরু করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন চাইবেন।’

তিনি বলেন, ‘তিন মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দেন যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এমন একটি সংস্কারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে, যেটি সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। দুঃখের বিষয় সে রকম কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তিন মন্ত্রী কেন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন, তা কোনো একজনের মাধ্যমে আমাদের জানানোর সৌজন্যটুকু দেখানোও হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদকে তিনজন মন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রাখা হয়নি। আমরা মনে করি এটি সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।’

এআর/এমবিআর/জেআইএম