জাতীয়

‘মনে হচ্ছিল জেলখানায় আছি’

‘দুদিন নাওয়া-খাওয়া নেই। এয়ারপোর্টের একটি ছোট রুমের ভেতর আমাদের ঘুমাতে দেয়া হতো। মনে হচ্ছিল জেলখানায় আছি। তবুও শত কষ্ট সহ্য করেছি। কারণ কিছুক্ষণ পরই মিলবে মালয়েশিয়ার আলো-বাতাস। মালিক আমাদের ভালোভাবে কাজ দিলে সব কিছু ভুলে যাব। কিন্তু তা আর হলো না। অবশেষে দেশেই ফেরত আসতে হলো।’ কথাগুলো বলছিলেন মালয়েশীয় ফেরত আসা মো. মোখলেছুর রহমান।

Advertisement

মোখলেছুরের বাড়ি মেহেরপুর মুজিবনগরের দারিয়াপুর গ্রামে। শুধু মোখলেছুরই নন, তার সঙ্গে মেহেরপুরের আরো কয়েকজন ফেরত এসেছেন। ফেরত এসেছেন অন্যান্য জেলার অনেকে। তিনি জানান, মেহেরপুর সদরের মোকবুল নামের এক দালালকে বিশ্বাস করে টাকা-পয়সা দিয়েছিলাম। তারই সব ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু শেষটা আমাদের এত কষ্টের হবে আগে বুঝতে পারিনি।

জানা গেছে, কোম্পানির মালিক বিমানবন্দরে কর্মী নিতে না আসায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন ৬৫ শ্রমিক। ঢাকা থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং-আরএল ৫৪৯) কাজের জন্য তাদের দেশটিতে পাঠায়।

মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে দুদিন থাকলেও মালিক তাদের নিতে আসেননি। শনিবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বেসরকারি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ফেরত পাঠায়। তবে এসব কর্মীর বিষয়ে ক্যাথারাসিজ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করছে।তারা বলেন, এসব কর্মী তাদের নয়। অন্য কোনো এজেন্সি তাদের নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করতে পারে।

Advertisement

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক পল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ফেরত কর্মীদের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে বাড়তি কিছু জানতে তিনি ক্যাথারাসিজ ইন্টারন্যাশনাল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। দেশের বাইরে অবস্থান করায় ক্যাথারাসিজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমীন স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন ধরেননি; তবে ক্ষুদে বার্তায় ফেরত কর্মীদের বিষয়ে অস্বীকার করেন।

গত ১১ অক্টোবর ৬৫ কর্মী নিয়ে বেসরকারি বিমানটি মালয়েশিয়ায় উড়াল দেয়। দেশটির কুয়ালালামপুরের সুপারম্যাক্স নামে একটি হ্যান্ডগ্লোব কোম্পানিতে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। ফেরত কর্মীরা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো থেকে ছাড়পত্র নিয়েছিলেন।

বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, ফেরত আসা কর্মীদের কাগজপত্রে যেসব এজেন্সির লাইসেন্স নম্বর আছে তার মধ্যে- আরএল১৩১০, আরএল০৮৩২, আরএল১৪০১ রয়েছে। তিনি বলেন, সব কাগজ ঠিক থাকার পরও সংশ্লিষ্ট রিক্রুর্টিং এজেন্সির উদাসীনতায় কর্মীরা ফেরত এসেছে। কেন ফেরত পাঠানো হয় এ বিষয়ে জানতে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন ফেরত আসা কয়েক জনের সঙ্গে। এদের একজন হচ্ছেন মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মেহেরপুরের আদম (দালাল) মোকবুলের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা-পয়সা দিয়েছিলাম। ভালোভাবে দেশটিতে পৌঁছে দেবে বলে আশ্বাস দেন।’

এরপর বিমানবন্দর সড়কের বনানী এলাকার হাজি টাওয়ারে ‘করিমন এন্টারপ্রাইজ’ (লাইসেন্স নম্বর-৯৭৬) এর মালিক মাসুদুল ইসলামের কাছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মালয়েশিয়া থেকে আমাদের ফেরত পাঠানো হয়। এসব আদমের কঠিন শাস্তি দাবি করেন মোখলেছ।

Advertisement

করিমন এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা সেলিম জানান, তাদের সঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারাসিজ ইন্টারন্যাশনাল পলের কথা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তারা এসব শ্রমিককে আবার পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।

ফেরত আসা আরেক কর্মী অনিক মিয়া জানান, তার কলিং ভিসার মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত থাকলেও তাকে ফেরত পাঠায়। কারণ হিসেবে জানান, বিমানবন্দরে কোম্পানির মালিক না এলে কোন কর্মী হস্তান্তর করে না মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন। তাদের কোম্পানির মালিক ভিয়েতনামে ছিল বলে ম্যানেজার নিতে এসেছিল। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ মালিককে না পেয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কিছুর দায়ভার ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিককে নিতে হবে। সব টাকা ফেরত দিতে হবে। নয়তো আবার মালয়েশিয়ায় পাঠাতে হবে।’

আরএম/এমআরএম/আরআইপি